চট্টগ্রাম, ২৪ জুন ২০২০ ঃ চট্টগ্রাম বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে আজ বুধবার (২৪-০৬-২০২০) মিডশীপম্যান ২০১৭/বি ব্যাচ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার (ডিইও) ২০২০/এ ব্যাচের নবীন কর্মকর্তাদের গ্রীষ¥কালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী (Admiral Aurangzeb Chowdhury) প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২০১৭/বি ব্যাচের ৪৪ জন মিডশীপম্যান এবং ২০২০/এ ব্যাচের ২৯ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ সর্বমোট ৭৩ জন নবীন কর্মকর্তা কমিশন লাভ করেন। এদের মধ্যে ০৩ জন মহিলা কর্মকর্তা রয়েছেন।
সদ্য কমিশনপ্রাপ্তদের মধ্যে মিডশীপম্যান ২০১৭/বি ব্যাচের মোঃ আসিফ মেহরাজ (Md. Asif Mehraj) সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জন করে সেরা চৌকস মিডশীপম্যান হিসেবে ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। এছাড়া মিডশীপম্যান আবু সাদাত মোঃ সায়েম (Abu Sadat Moh. Sayem) প্রশিক্ষণে ২য় সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী হিসেবে ‘নৌপ্রধান স্বর্ণ পদক’ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০২০/এ ব্যাচ হতে এ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট আব্দুস সামাদ আশিক (Abdus Samad Ashik) শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জনকারী হিসেবে ‘বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণ পদক’ লাভ করেন।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে নৌবাহিনী প্রধান তাঁর ভাষণে, তরুণ প্রজ›েমর কর্মকর্তাদের দেশ রক্ষার মহান কর্তব্যে আত্মনিয়োগ করে দেশ সেবার কাজে এগিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বীর নৌসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের কথা শ্রদ্ধাভরে স¥রণ করেন।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অসামান্য প্রজ্ঞায় বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে পরিচিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে আমরা পেয়েছি আরও বিশাল সামুদ্রিক অঞ্চলের নিষ্কন্টক ভৌগলিক অধিকার। বিস্তীর্ণ সামুদ্রিক অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব ও সমুদ্র সম্পদ সুরক্ষা এবং সরকারের ব্লু-ইকোনমি প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর গুরুত্ব এবং কার্যপরিধি বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্রাফ্ট, হেলিকপ্টার, আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুদ্ধজাহাজ এবং সর্বোপরি দুটি সাবমেরিন সংযোজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীর মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নেও নেয়া হয়েছে ব্যাপক পদক্ষেপ। এছাড়া নৌসদস্যদের পেশাগত মানোন্নয়নে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে তোলা হচ্ছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, নবীন কর্মকর্তারা নেভাল একাডেমি থেকে অর্জিত জ্ঞান যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে যোগ্য কর্মকর্তা হিসেবে গড়ে তুলবে এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে এই প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও অগ্রগতির পথে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে। পেশা হিসেবে দেশ সেবার এ পবিত্র দায়িত্বকে বেছে নেয়ায় নৌপ্রধান নবীন কর্মকর্তাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। প্রধান অতিথি নবীন কর্মকর্তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অটুট রাখার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নৌপ্রধান বলেন, বিশ¡ব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও কাজকর্ম স্থবির এবং সীমিত আকারে পরিচালনা করতে বাধ্য হয়েছি। প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে অভিযোজনের মাধ্যমে চলমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রম স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে নবীন কর্মকর্তারা যে অদম্য আগ্রহ ও দৃঢ় মনোবলের পরিচয় দিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি বিশ¡ব্যাপী সংক্রমক এই প্রাকৃতিক মহামারীর মাঝেও একাডেমির যে সকল কর্মকর্তা, নাবিক ও অসামরিক ব্যক্তিবর্গ নবীন কর্মকর্তাদের এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করেছেন, তাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।
রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম নৌঅঞ্চলের সীমিত সংখ্যক সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।