ঢাকা, ০২ জুলাই ২০১৮ ঃ দক্ষিণ সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শহীদ শান্তিরক্ষী কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশরাফ সিদ্দিকীর নামাযে জানাযা সোমবার (০২-০৭-২০১৮) ঢাকা সেনানিবাসস্থ চপার্সডেন-এ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানগণ জানাযা শেষে শহীদের মরদেহে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল ষ্টাফ অফিসার সহ সশস্ত্র বাহিনীর উধর্¡তন কর্মকর্তাগণ ও বিভিন্ন পদবীর সামরিক-বেসামরিক সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। শহীদ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশরাফ এর অকাল মৃত্যুতে নৌবাহিনী প্রধান গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে নৌপ্রধান বলেন, শহীদ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশরাফ তাঁর কর্মজীবনে যে অনন্য অবদান রেখেছেন, তা সকল নৌসদস্যদের জন্য অনুকরণীয় ও স¥রণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁর এই মহান আত্মত্যাগ বিশ¡শান্তি প্রতিষ্ঠায় নৌবাহিনী তথা বাংলাদেশের জন্য মর্যাদা ও গৌরব বয়ে এনেছে।
পরে মরহুম লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশরাফ সিদ্দিকীর মরদেহ বনানী সামরিক কবরস্থানে নিয়ে আসা হয়। এসময় তাঁর হাজারো সহকর্মী অশ্রুসজল চোখে জাতীয় এই বীরকে শেষ বিদায় জানান এবং শহীদের সম্মানে ১২ বার ফাঁকা গুলি বর্ষণ করা হয়। পরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকার বনানীস্থ সামরিক কবরস্থানে শহীদের দাফন সম্পন্ন করা হয়। এরপর নৌপ্রধান শহীদ কর্মকর্তার স্ত্রীর হাতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও জাতিসংঘের পতাকা, ক্যাপ, সম্মান সূচক সোর্ড ও মেডেল তুলে দেন।
শহীদ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশরাফ সিদ্দিকী দক্ষিণ সুদানের জুবা শহরে আনমিস সদর দপ্তরে মিলিটারি লিঁয়াজো অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি গত ২৬ জুন ২০১৮ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি গাড়ি বহরের নিরাপত্তা প্রদানের দ্বায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে নেপালীজ ফোর্স প্রটেকশন টিমের সাথে ইয়েই শহর হতে লাসু শহরের উদ্দেশ্যে গমন করেন। গাড়ি বহরটি দেশটির কেন্দ্রীয় ইকুয়টোরিয়া প্রদেশে ত্রাণ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত ছিল। লাসু শহরের উদ্দেশ্যে গমনকালে ক্যাম্প সাইট হতে ১০ কিঃ মিঃ অদূরে তিনি অজ্ঞাত বন্দুকধারী কর্তৃক অ্যামবুশের স্বীকার হয়ে পিঠে গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে লাসু হতে ইয়েই এয়ারপোর্টে নিয়ে আসার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।
জাতিসংঘের গর্বিত সদস্য হিসেবে তাঁর এই অসামান্য অবদানকে কৃতজ্ঞচিত্তে স¥রণ করতে জাতিসংঘ মহাসচিব এর পক্ষে বিশেষ প্রতিনিধি এবং দক্ষিণ সুদানে নিয়োজিত শান্তিরক্ষা মিশনের প্রধান শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অজ সোমবার, ২ জুলাই ২০১৮ সকালে কর্মকর্তার মরদেহ ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
মৃত্যুকালে শহীদ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশরাফ সিদ্দিকী স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। তিনি ১৯৭৮ সালের ১ অক্টোবর কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর এর জোদ্দারপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সরাসরি কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। বিশ্বশান্তি রক্ষায় দ্বায়িত্ব পালনরত অবস্থায় শহীদ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আশরাফ সিদ্দিকীর এই মহান আত্মত্যাগ বাংলাদেশ নৌবাহিনী তথা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে।