ঢাকা, ০৫ নভেম্বর ২০১৯ ঃ- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মোঃ আবদুল হামিদ মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর ২০১৯) বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু তে আনুষ্ঠানিকভাবে বিমান বাহিনীর ১, ৩, ৫, ৮, ৯ এবং ৭১ নং স্কোয়াড্রন কে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করেন।
¬¬
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুুল হামিদ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুর কুচকাওয়াজ চত্ব¦রে এসে পৌঁছালে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত এবং বঙ্গবন্ধু ঘাঁটির এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ সাঈদ হোসেন তাঁকে স্বাগত জানান।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর রয়েছে এক গৌরবময় ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের ডিমাপুরে একটি এ্যালুয়েট (অষড়ঁবঃঃব) হেলিকপ্টার, একটি ডিসি-৩ ড্যাকোটা (উধশড়ঃধ) ও একটি অটার (ঙঃঃবৎ) এবং কতিপয় দুঃসাহসী বৈমানিক ও বিমানসেনা নিয়ে গড়ে উঠে বর্তমান বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নিউক্লিয়াস ‘কিলোফ্লাইট’। কিলোফ্লাইট গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ইতিহাসে এক গৌরবৌজ্জ্বল দিনের সূচনা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যরা প্রয়োজনীয় যুদ্ধোপকরণ ছাড়াই শুধুমাত্র দুটি বিমান ও একটি হেলিকপ্টার নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দুঃসাহসিক আকাশ যুদ্ধ পরিচালনা করেন। জন্মলগ্ন হতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সমগ্র আকাশ প্রতিরক্ষা নিশ্চিতকরণ সহ, সেনা, নৌ ও অন্যান্য বাহিনীকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান, দুুর্যোগ মোকাবেলা এবং অসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা প্রদান নিত্যকার নানাবিধ কার্যক্রমে অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে সম্পন্ন করে আসছে। অকৃত্রিম দেশপ্রেম ও নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরুপ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর তিনটি ঘাঁটি ইতিপূর্বেই ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রাপ্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ১, ৩, ৫, ৮ ও ৯ উড্ডয়ন স্কোয়াড্রন এবং ৭১ র্যাডার স্কোয়াড্রনকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করা হল। এই পাঁচটি উড্ডয়ন স্কোয়াড্রন এবং একটি র্যাডার স্কোয়াড্রনের রয়েছে স্বাধীনতাযুদ্ধে দুর্দমনীয় অবদান এবং নতুন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রত্যয় নিয়ে গাঁথা এক গৌরবোজ্জল ইতিহাস। এর মধ্যে, ১ ও ৩ স্কোয়াড্রনের উন্মেষ ঘটে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম দুটি উড্ডয়ন স্কোয়াড্রন হিসেবে আতœপ্রকাশ করে। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দিক নির্দেশনায় বাংলাদেশের আকাশসীমার নিরবিচ্ছিন্ন প্রতিরক্ষা নিশ্চিতকল্পে একে একে গড়ে তোলা হয় ৫, ৮ ও ৯ উড্ডয়ন স্কোয়াড্রন এবং ৭১ র্যাডার স্কোয়াড্রনসমূহ। জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মন্ত্রে দীক্ষিত এসকল স্কোয়াড্রনের দেশের মহান দায়িত্ব পালন এবং দেশের জরুরী পরিস্থিতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে।
ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রথমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুর কুচকাওয়াজ চত্বরে অনুষ্ঠিত সুসজ্জিত কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দেন উইং কমান্ডার মাসুদুর রহমান। ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান শেষে জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এ সময় জাতীয় ও বিমান বাহিনীর পতাকাসহ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুইটি হেলিকপ্টার এক মনোজ্ঞ ফ্লাগ পাসে অংশগ্রহণ করেন। পরে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড সমুন্নত রাখার জন্য মোনাজাত করা হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিমান বাহিনীর সকল স্তরের সদস্যদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জীবন উৎসর্গ করে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয় অর্জনকে তরান্বিত করার জন্য বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান এবং ‘কিলোফ্লাইট’ সদস্যদের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি আরও বলেন যে, মহান ¯¦াধীনতাযুদ্ধে বিমান বাহিনী সদস্যদের সাহসিকতাপূর্ণ অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবে। ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে উন্নয়নের যে অপার সম্ভাবনার দিগন্ত উম্মোচন করেছে, তারই ধারাবাহিকতায় বিমান বাহিনীকে আরো আধুনিকায়নের মাধ্যমে কৌশলগত দিক থেকে একটি সূদৃঢ়, শক্তিশালী ও কার্যকরী বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিমান বাহিনীর সকল সদস্যকে পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলার সাথে কাজ করে যাওয়ার জন্য তিনি আহবান জানান। বক্তব্য শেষে প্যারেড কর্তৃক মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে রাষ্ট্রপতি সালাম ও তিন বার জয়ধ্বনি প্রদান করা হয়। রুট মার্চ শেষে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফাইটার ও পরিবহন বিমান কর্তৃক ফ্লাইং ডিসপ্লে (স্মোকপাস) অনুিষ্ঠত হয়।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি সেখানে পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন এবং সবশেষে নির্বাচিত কর্মকর্তা ও বিমানসেনাদের সাথে আলোকচিত্রে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য, সামরিক, আধা-সামরিক বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং অসামরিক অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।