চট্রগ্রাম, ১৪ মে ২০১৮ ঃ- বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার, বিবিপি, এনডিসি, এসিএসসি সোমবার (১৪-০৫-২০১৮) বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হকে অবস্থিত ১ নং স্কোয়াড্রন, ৩ নং স্কোয়াড্রন এবং ট্রেনিং উইং-কে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পতাকা প্রদান করেন।
বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক এর প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে বিমান বাহিনী প্রধান কে স্বাগত জানান উক্ত ঘাঁটির এয়ার অধিনায়ক এয়ার কমডোর মোরশেদ হাসান সিদ্দিকী, বিএসপি, পিএসসি।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদানের মধ্য দিয়ে ১নং স্কোয়াড্রনের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭১ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের ডিমাপুরে গঠিত কিলোফ্লাইটের মাধ্যমে ৫০টি সফল আক্রমণ পরিচালনা করে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয় কে ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে উক্ত স্কোয়াড্রন বিশেষ অবদান রেখেছিল। ১নং স্কোয়াড্রন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অপারেশনাল কর্মকান্ডের পাশাপাশি পার্বত্য চট্রগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করে আসছে। এছাড়াও উক্ত স্কোয়াড্রন কর্তৃক ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস এবং ২০০৭ সালে বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ সিডর এ ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য পরিচালিত রিলিফ মিশন সর্বমহলে স্বরণীয় হয়ে আছে। এই স্কোয়াড্রনটি সুদক্ষ বৈমানিক গড়ার সুনিপুণ প্রশিক্ষণ অব্যাহত রেখেছে, যার ফলে বৈমানিকগণ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণে সক্ষমতার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করেছে।
‘সদা জাগ্রত সদা প্রস্তুত’ মন্ত্রে দীক্ষিত ৩ নং স্কোয়াড্রনের অপারেশনাল কর্মকান্ডের সূচনা হয় ১৯৭১ সালের ০৩ ডিসেম্বর চট্রগ্রামস্থ তৎকালীন ইস্টার্ন রিফাইনারী এবং বন্দর এলাকায় একটি অটার বিমান কর্তৃক দুঃসাহসিক অভিযানের মাধ্যমে। জন্মলগ্ন থেকে উক্ত স্কোয়াড্রনটি বিমান পরিবহন, প্রাকৃতিক দূর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম, ছত্রীসেনাদের প্রশিক্ষণ এবং সশস্ত্র বাহিনীর জনবল ও মালামাল পরিবহনের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছে। তাছাড়াও এই স্কোয়াড্রনটি দেশের বাইরে সংঘটিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমে অসামন্য অবদান রেখে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করেছে। অত্র স্কোয়াড্রন বিপুল সংখ্যক বৈমানিক ও কারিগরীকর্মীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় একটি সুসজ্জিত বিমান বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে ২৬ জুলাই ১৯৭৫ সালে বিমান বাহিনী ট্রেনিং উইং প্রতিষ্ঠিত হয়। কালের পরিক্রমায় ট্রেনিং উইং বিমান বাহিনীর চালিকাশক্তি বিমানসেনাদের অন্যতম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। অদ্যাবধি ট্রেনিং উইং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩২১ জন, নৌ বাহিনীর ৩৯৩ এবং শ্রীলংকা বিমান বাহিনীর ২৫৭ জন প্রশিক্ষণার্থীসহ সর্বমোট ৬৩০০০ এর ও অধিক প্রশিক্ষণার্থীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে দক্ষ জনশক্তিতে পরিনত করে দেশের উন্নয়নে অসামান্যঅবদান রাখছে। উক্ত স্কোয়াড্রনদ্বয় ও ট্রেনিং উইং এর স্বীকৃতিস্বরূপ বিমান বাহিনী পতাকা প্রদান করা হয়।
বিমান বাহিনী পতাকা প্রদানকালে বিমান বাহিনী প্রধান বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোঃ আবদুল্লাহ আল মাহবুব, এএফডব্লিউসি, পিএসসি। বিমান বাহিনী প্রধান বিমান বাহিনীর সকল স্তরের সদস্যদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিমান বাহিনী সদস্যদের সাহসিকতাপূর্ণ অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করবে। এছাড়াও তিনি বিমান বাহিনী পতাকা অর্জন করায় ১ নং স্কোয়াড্রন, ৩ নং স্কোয়াড্রন এবং ট্রেনিং উইং এর প্রতিটি সদস্যকে ধ্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং বিমান বাহিনীর সম্মানের প্রতিক হিসেবে প্রদানকৃত কালার এর মর্যাদা ও সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে তিনি সকলকে সচেষ্ট থাকতে বলেন। বিমান বাহিনী প্রধান পরে পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে বিমান বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারগণ, তিন বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এবং বিমান বাহিনীর অন্যান্য সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।