Home » মধ্য আফ্রিকায় বাংলাদেশী শান্তি সেনাঃ সরেজমিন কার্যক্রম পরিদর্শনে শুভেচ্ছা দল –নূর ইসলাম হাবিব, সহকারী পরিচালক, আইএসপিআর

মধ্য আফ্রিকায় বাংলাদেশী শান্তি সেনাঃ সরেজমিন কার্যক্রম পরিদর্শনে শুভেচ্ছা দল –নূর ইসলাম হাবিব, সহকারী পরিচালক, আইএসপিআর

Author: আইএসপিআর

মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র  বিশে^ ৪৫তম বৃহত্তম দেশ। এর আয়তন ৬ লাখ ২২ হাজার ৯৮৪ বগর্ কিলোমিটার যা বাংলাদেশের মোট আয়তনের চেয়ে  চার গুন বেশী।লোক সংখ্যা ৫২ লাখ ৭৯ হাজার (২০১৪ মোতাবেক)। রাজধানী বাঙ্গুই। ওরা বলে বাঙ্গী। এ দেশে শিক্ষার হার ৫৬%। প্রধান ধর্ম খ্রিষ্টান। এরা মোট জনসংখ্যার ৫০%। এ দেশে মুসলিম জনসংখ্যা ১৫% এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ৩৫%। সরকারী ভাষা ২টি Ñ স্যাংগো এবং ফ্রেন্স। রাষ্ট্র প্রধান ক্যাথরিন সাম্বা পাঞ্জা এবং প্রধানমন্ত্রী মাহামাত কামুন। মধ্য আফ্রিকানদের গড় আয়ু পুরুষ ৪৫ বছর এবং মহিলা ৪৮ বছর। দেশটিতে এইচআইভি এইডস বহনকারী জনসংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার। দেশটির প্রাপ্ত বয়স্ক (১৫-১৯ বছর) জনসংখ্যার প্রায় ৪.৭% এই রোগে আক্রান্ত।

মধ্য আফ্রিকা সম্পূর্ন স্থল বেষ্টিত একটি দেশ। এর উত্তরে চাঁদ, দেিণ ডিআর কঙ্গো, রিপাবলিক অব কঙ্গো, পশ্চিমে ক্যামেরুন এবং পূর্বে সুদান অবস্থিত। দেশটির মুদ্রার নাম ফ্রা্্ঁ, ১ ডলার সমান ৫০০ ফ্রাঁ। প্রধান রফতানী পণ্য হীরা (৪০-৫৫%)। তাছাঢ়া বছরে ২৫ হাজার হতে ৪৫ হাজার টন তুলা রফতানী হয়। অন্যান্য রফতানী পণ্য হলো – ইউরেনিয়াম, স্বর্ন, টিম্বার ও পেট্রলিয়াম। দেশটির জনগণের মাথাপিছু আয় ৪০০ মার্কিন  ডলার।

দেশটির প্রধান খাদ্য শস্য মৌআলু, কাসাবা, বাদাম, ভট্টা, ধান, যব, তিল, কাঁচকলা ইত্যাদি। দেশটিতে পাকা সড়ক আছে মাত্র ৭০০ কিলোমিটার। দেশটির সাথে ক্যামেরুন ও চাঁদের  সরাসরি সড়ক যোগাযোগ রয়েছে।

সেন্ট্রাল আফ্রিকা ১৯৬০ সালের ১৩  আগষ্ট ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ২০০৩ সালে দেশটিতে বর্তমান সংকটের শুরু। দেশটির একমাত্র মিলিটারি এফএসিএ (forces army of central africa- FACA) সেখানকার রাজনৈতিক সংকট কালে ভেঙ্গে দেওয়া হয়। বর্তমানে সীমিত সংখ্যক জাতীয় পুলিশ এবং জেন্ডারমেরি (কমিউনিটি পুলিশ) দেশটির প্রধান প্রধান শহরে দায়িত্ব পালন করছে। দেশটির  স্বাধীনতা লাভের পরেও প্রথম প্রেসিডেন্ট ডেভিড ডাকোর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখে ফ্রান্স  মধ্য আফ্রিকার উপর তার প্রভাব অক্ষুন্ন রাখে। ১৯৬৬ সালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই-এর অঙ্গিকার করে তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল বোকাসা অভ’্যত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকে মধ্য আফ্রিকায় ক্ষমতা গ্রহণের লক্ষে অভ’্যত্থান ও পাল্টা অভ’্যত্থান চলতে থাকে।

২০০৩ সালে প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকোয়িস বোজাজে প্রচলিত সংবিধান ভঙ্গ করে নতুন খসড়া সংবিধান প্রনয়নের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা শুরু করে। ২০১১ সালে বোজাজে জালিয়াতি নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে সশস্ত্র সেলেকা বাহিনী  সরকারের সাথে শান্তি চুক্তিতে উপনিত হয়। কিন্তু ২৪ মার্চ ২০১৩ সালে সেলেকা গ্রুপ অভ্যূত্থান করে  রাজধানী দখল করে নেয়। এসময় প্রেসিডেন্ট বোজাজে দেশ ত্যাগ করে। ক্ষমতায় আসেন সেলেকা নেতা মাইকেল জোতদিয়া। এরপর সেলেকা গ্রুপ ভেঙ্গে দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক বিদ্রোহী অসÍ্র সমর্পন করতে অসম্মতি জানায় এবং ধীরে ধীরে তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সেলেকা বিদ্রোহীদের সাথে এন্টি বালাকা বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়। তাদের সংঘর্ষ ব্যাপক গণহত্যার দিকে মোড় নেয়। সেলেকা ও এন্টিবালাকা গ্রুপ সম্মিলিতভাবে গণহত্যা শুরু করে। ২০১৪ সালের  ১১ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট মাইকেল জোতদিয়া ও প্রধানমনÍ্রী  নিকোলাস তিয়েনগে ক্ষমতা ত্যাগ করে। এরপর আফ্রিকান ইউনিয়নের অনুরোধে মিজ ক্যাথেরিনা সাম্বা পাঞ্জা মধ্য আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট মনোনীত হন। উপজাতীয় এন্টিবালাকা গ্রুপ সেলেকা নেতা মাইকেল জোতদিয়ার পদত্যাগের পর মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক অত্যাচার শুরু করে। এভাবে সেলেকা এবং এন্টি বালাকা গ্রুপের সংঘর্ষ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে রুপ নেয়। এ অবস্থায় ২০১৪  সালের ১৫ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা পরিষদ মধ্য আফ্রিকায় শন্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করে।

সেলেকা গ্রুপ দুইটি উপদলে বিভক্ত। একটি হলো  convention of patriots for justice and peace এবং অন্যটি হলো patriotic convention for saving the country সেলেকা বাহিনীর আন্দোলন কোন ধর্মীয় আন্দোলন না হলেও এটি খ্রিষ্টান বিরোধী আন্দোলন।

এন্টি বালাকা হলো সেলেকা বিরোধী সশস্ত্র মিলিশিয়া বাহিনী। এটি ১৯৯০ সালে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এন্টিবালাকা প্রধানত খ্রিষ্টান ও প্রকৃতি পূজারীদের নিয়ে গঠিত। ২০১৩ সালে এটি এন্টি বালাকা হিসাবে আবির্ভুত হয়।

মধ্য আপ্রিকায় শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হলো Ñবাংলাদেশ, বলিভিয়া,বুরকিনা ফসো,ক্যামেরুন, কঙ্গো , চেক প্রজাতন্ত্র, ভ’টান, বুরুন্ডি, ডি আর কঙ্গো, মিশর , ফ্রান্স, গ্যাবন, ঘানা, ইন্দৈানেশিয়া, মাদাগাস্কার, মৌরিতানিয়া, নেপাল, মরক্কো, নাইজার, পাকিস্তান, পালাউ, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, শ্রীলংকা, তাঞ্জানিয়া, ইয়েমেন ও জাম্বিয়া।

মধ্য আফ্রিকায় জাতিসংঘ মিশনের নামÑ  united nations multidimentional integrated stabilisation mission in car or minusca.  মিনুস্কা ৪ ভাগে বিভক্তÑ ফোর্স হেড কোয়ারটার্স, সেক্টর ওয়েষ্ট, সেন্ট্রাল সেক্টর এবং সেক্টর ইষ্ট। মিনুস্কায় জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি হলেন লে: জেনারেল বাবাকার গায়ে (সেনেগালিজ), ফোর্স কমান্ডার হিসাবে আছেন মেজর জেনারেল মার্টিন চোমু টুমেন্টা ( ক্যামেরুন), এবং ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসাবে আছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ। এখানে জাতিসংঘ মিশনের  প্রধান কাজ হচ্ছে- বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা বিধান করা, মানবিক সহায়তা প্রদান, মানবাধিকার সুরক্ষা করা,নিরস্ত্রীকরণ, প্রত্যাবাসনে সহায়তা করা এবং  র্নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করা।

মধ্য আফ্রিকায় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ও নভেম্বরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭৫০ সদস্যের ব্যানব্যাটÑ১ (বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন-১) মোতায়েন করা হয়। ব্যানব্যাট সদস্যরা বাঙ্গুই, বোয়ার, বোয়ালি, বোসেমবেলি, ইয়ালোকে, বোসেনটেলি ও বেলোকে শহরে নিয়োজিত। ব্যানব্যাট Ñ ১ এর কন্টিনজেন্ট কমান্ডার কর্নেল এ বি এম শেফাউল কবির। ব্যানব্যাটের প্রধান দায়িত্ব বাঙ্গুই থেকে ক্যামেরুন সীমান্ত পর্যন্ত ৬১০ কিমি মহাসড়কের নিরাপত্তা বিধান করা। তাছাড়া বেসামরিক জনসাধারণের নিরাপত্তা বিধান করাও ব্যানব্যাটের অন্যতম দায়িত্ব। বাঙ্গুই থেকে ক্যামেরুন সীমান্ত পর্যন্ত মেইন সাপ্লাই রুটের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি ব্যানব্যাট  সদস্যরা জাতিসংঘ স্থাপনা, বোয়ার বিমান বন্দরের নিরাপত্তা বিধান করা, বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গের এসকট প্রদান এবং অন্যান্য অর্পিত দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিতে¦র সাথে পালন করে যাচেছ। বাঙ্গুই  থেকে ক্যামেরুন পর্যন্ত ৬১০ কিমি দূরত্বের সড়কটি মধ্য আফ্রিকার অর্থনীতির লাইফ লাইন হিসাবে পরিচিত। বাংলাদেশ ব্যাটালিয়নের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে এ সড়কটি ছিল  street without joy. লুটেরা , দস্কৃতিকারীরা প্রায়ই এ সড়কে পণ্যবাহী পরিবহনে আকস্মিক হামলা চালিয়ে মালামাল লুট করে নিয়ে যেত, দায়িত্বরত লোকজনকে হতাহত করত। বোয়ারের নিকটবর্তী লোকোতি গ্রামে এরকম অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। এ এলাকার দায়িত্ব পাওয়ার পর পার্বত্য চট্টগ্রামের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন সাফল্য অর্জন করে। বিশেষ করে  লোকোতি গ্রামের লুটপাট ও ডাকাতির ঘটনা একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। সড়কটি হয়ে ওঠে street with joy. এভাবে এদেশের জনগণের হৃদয় মন জয় করেছে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা।

মরক্কো হয়ে মধ্য আফ্রিকা

মালিতে আমাদের সফর শেষ করে ১২ মে রাত ২টা ৪৫ মিনিটে রয়াল এয়ার মরক্কোয় চড়ে মরক্কোর  ক্যাসাব্লাংকার উদ্দেশে  বামাকো ত্যাগ করি। আমরা যাব মধ্য আফ্রিকার রাজধাণী বাঙ্গুই। কিন্তু বামাকো থেকে বাঙ্গুই কোন সরাসরি বিমান যোগাযোগ নেই। মরক্কোর বানিজ্যিক নগরী  ক্যাসাব্লাংকায় আমরা পৌছলাম স্থানীয় সময় সকাল ৭টায়। আমাদেরকে গাইড করে নিয়ে যেতে এসেছে মরক্কোয়  বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী। আমরা বিমান বন্দরের আনুষঠানিকতা শেষ করে বাইরে চলে আসছি। সবার পেছনে আমি এবং দেশ টিভির ক্যামেরাম্যন মহিউদ্দিন শিবলী। আমি সামনে আগাচ্ছি। পেছনে শিবলী। আমার লাগেজ স্ক্যানিং করার পর অপেক্ষা করছি শিবলীর জন্য। ও ওর লাগেজ স্ক্যানিং করার জন্য মেশিনে দিবে। এমন সময় নিরাপত্তাকর্মী এসে ্ওকে জিগ্জাসাবাদ করছে। ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে ওদের বিপত্তি। ভিডিও ক্যামেরা বাইরে নিয়ে যেতে দিবে না। এক পর্যায়ে শিবলীকে তাদের সাথে নিয়ে গেল। আমরা বাইরে অপেক্ষা করছি। অনেকক্ষণ পর শিবলী আসলো। নিরাপত্তা বিভাগ ক্যামেরা রেখে দিয়ে টোকেন দিয়ে দিয়েছে।

আমরা রেন্ট-এ কার-এ করে  ক্যাসাব্লাংকা শহরের দিকে যাচ্ছি। চমৎকার সড়ক। কোন যানজট নেই। ধূলো বালিহীন প্রশস্ত সড়ক দিয়ে দ্রুত গতিতে চলছে আমাদের গাড়ী। আধা ঘন্টার মধ্যে আমরা পৌছে গেলাম শহরে। আমরা হোটেল মানার-এ উঠলাম। আমাদেরকে এখানে অভ্যর্থনা জানালেন মরক্কোয় নিযুক্ত  বাংলাদেশের   রাষ্ট্রদূত মান্যবর মনিরুল ইসলাম।  রুম সল্পতার কারণে আমরা কজন গেলাম পার্শবর্তী হোটেলে। নাম হোটেল নেগোসিয়েন্ট। মালিকের নাম মোহামেদ।  এদেশের সরকারী ভাষা আরবী ও ফ্রেন্স। মি. মোহামেদ ইংরেজী বোঝেন এবং বলতে পারেন। আমরা  পরিচয় দিলাম। তিনি আমাদের হাসি মুখে অভ্যর্থনা জানালেন। তিনি বাংলাদেশকে ভালোই চেনেন। বললেন অনেক বাংলাদেশী আমাদের এখানে আসেন। তারাও আমার হোটেলে থাকেন। ভারত, পাকি¯তান থেকেও অনেকে আসেন। চাবি নিয়ে আমাদের রুমে গেলাম। একটু পরে মহিলা ক্লিনার আসলো রুম পরিস্কার করতে। খুবই সুন্দরী । এদেশের মানুষ খুবই সুন্দর। বিমান বন্দরে দেখেছি সুন্দরী সব মহিলা ক্লিনার। বিস্মিত হবেন শুধু তাদের হাতে ক্লিনিং সামগ্রী দেখে।

আমরা কাপড় চেঞ্জ  করে  নিলাম। তার পর বের হলাম  রেস্টুরেন্টে নাস্তা করার জন্য। ছোট একটি রেষ্টুরেন্টে আমরা বসেছি নাস্তা করতে। পাশে এসে বসলো সুন্দরী দুই তরুনী। মনে হলো স্কুল/ কলেজ পড়–য়া  ছাত্রী হবে।  কোন জড়তা নেই , সংকোচহীন, সাবলীল। আধুনিক পোষাক।

নাস্তা শেষে আমরা পাশের দোকানে গিয়ে ফ্রেস জুস খেলাম । আমাদের  গাইড করছেন দূতাবাস কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী। অর্ডার দেওয়ার ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে জুস  সরবরাহ করল দোকানী।  দোকান বেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন।  ধূলাবালিহীন রাস্তার পাশে সারি সারি  জুসের দোকান।

ক্যাসাব্লাংকায় হিজাব, বোরকা পরা নারী চোখে পড়লনা। টি শার্ট, জিন্সের প্যান্ট পরছেন মহিলারা। টি শার্ট জিন্সের প্যান্ট পরা এক মহিলা যাচেছন আমার পাশ দিয়ে। দেখে আামাকে সালাম দিলেন। আমি একটু অবাক হলাম। আমাদের দেশে রাস্তায় অপরিচিত কোন মহিলা অপরিচিত কোন পুরুষকে  সালাম দিবে তা কল্পনা করা যায়না।

সবাই নাস্তা সেরে হোটেল মানার-এর সামনে জড়ো হচিছ। যাব আটলান্টিকের পাড়ে বিখ্যাত হাসান  দ্বিতীয় মসজিদ দেখতে। এরই মধ্যে আমাদের চার পাশে এসে জড়ো হয়েছে কয়েকজন ভিক্ষুক। ঢাকার মত দৃশ্য। বিদেশী দেখলেই  হাত পাতা। এসেছে একজন হকার। প্যান্টের বেল্ট দেখচ্ছে আমাদের। তবে দাম চাচেছ চড়া। অনেক কথা বলছে। যেকরেই হোক আমাদের কাছে বিক্রি করেই ছাড়বে। গ্যাস লাইটার  জালিযে বেল্টের গায়ে ধরছে খাঁটি লেদারের বেল্ট প্রমান করার জন্য। আমাদের আগ্রহ না দেখে ফিরে গেল হতাশ হয়ে।

আমরা এক এক করে গাড়ীতে উঠলাম। আমাদের দলনেতা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. সালাহ্ উদ্দিন মিয়াজী ( বর্তমানে উপাচার্য, বিইউপি )। অন্য সদস্যরা হলেনÑ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল মো: জাকির হোসেন ভঞা, লে. কর্নেল মোতাহার হোসেন, লে. কর্নেল মো: জাহেদুর রহমান, মেজর মোহাম্মদ ফিরোজ আহমেদ, মেজর মুনতাসির রহমান, অর্থ মণÍ্রনালযের যুগ্ম সচিব কাজী মাহবুব হাসান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালযের যুগ্ম সচিব মো: সফিকুল আহম¥দ, সিজিডিএফ-এর জয়েন্ট কন্ট্রোলার জেনারেল খুরশীদ আলম পাটোয়ারী, আইএসপিআর থেকে আমি  মো: নূর ইসলাম (হাবিব), দেশ টিভির রিপোর্টার আপেল মাহমুদ, ক্যামেরাম্যান মহিউদ্দিন শিবলী এবং সেনাসদর ওবারসীজ পরিদপ্তরের সার্জেন্ট মো: মনিরুল ইসলাম।

হাসান দ্বিতীয় মসজিদ বিশে^র অন্যতম দৃষ্টি নন্দন ও মনোরম ¯্থাপনা। মরক্কোর রাজা হাসান দ্বিতীয় মসজিদটি নির্মাণ করেন। এর নির্মাণ কাজ  শুরু হয় ১২ জুলাই ১৯৮৬ সালে। ১৯৮৯ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা বিলম্বিত হয়। অতপর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৯৩ সালে এবং সে বছর ৩০ আগষ্ট উদে¦াধন করা হয়।  মসজিদটির নক্সা করেন খ্যাতিমান ফরাসী স্থপতি মিশেল পিনসিউ এবং নির্মাণ করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ বয়ুগস। এটি মরক্কোর বৃহত্তম মসজিদ এবং বিশে^র ১৩তম বৃহৎ। মসজিদটিব মিনার ৬৯০ ফুট উঁচু যা বিশে^র সর্বোচ্চ মিনার। মিনারটির   চ’ড়ায় রয়েছে লেজার বীম যা সন্ধ্যায় ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রীয়ভাবে জ¦লে ওঠে। এর আলোক রশ্মি মক্কা অভিমুখে বিচ্ছুরিত হয় এবং আটলান্টিক মহাসাগরের ৩০ কিমি দূর পর্যন্ত পৌঁছায়।

এ মসজিদে একত্রে ১ লাখ ৫ হাজার লোক নামাজ পড়তে পারেÑ অভ্যন্তরে ২৫ হাজার এবং বহি:প্রাঙ্গনে ৮০ হাজার। মসজিদ কমপ্লেক্সের আয়তন ২২ একর। আটলান্টিক তীরের এ মনোরম ও  দৃষ্টি নন্দন মসজিদটির এক অংশ স্থল ভাগে এবং অন্য অংশ মহাসাগরের জলভাগে। এর ভিত এবং দেয়াল গাত্র এমনভাবে পাথর ঢালাই করা যাতে মহাসাগরের আছরে পড়া ঢেউ ¯থাপনার  কোন ক্ষতি করতে না পারে।

মসজিদ কমপ্লেক্সের পরিবেশ খুবই চমৎকারÑদূষণমুক্ত, ধূলাবালিহীন, কোলাহলমুক্ত এবং শহর থেকে অনেক দূরে। আটলান্টিক মহাসাগর থেকে আগত নির্মল বাতাস যেকারো মন জুড়িয়ে দিবে। মসজিদ কমপ্লেক্সে রয়েছে মাদ্্রাসা, গোছলখানা,ওযুখানা, মরক্কোর ইতিহাসভিত্তিক যাদুঘর, সম্মেলন কেন্দ্র এবং বৃহৎ লাইব্রেরী যেটিকে মুসলিম বিশে^র সবচেয়ে  সমৃদ্ধ লাইব্রেরী মনে করা হয়। কমপ্লেক্সে রয়েছে ৪১টি ফোয়ারা এবং মনোরম ফুলের বাগান। এ স্থপানাটি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষনীয় এবং পিকনিক স্পট। দেখা যাচেছ বহি:রাঙ্গনে অনেক তরুন তরুনী বসে গল্প করছে। অনেকে আবার এসেছে পরিবারের সদস্যসহ।

রাজা মোহাম্মদ পঞ্চমÑএর সম্মানার্থে নির্মিত এ মসজিদটি শুধু এবাদত বন্দেগীর জন্যই বিখ্যাত নয় বিশ^ব্যাপী বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র হিসাবেও। এ মসজিদে নামাজ পড়তে এসে একই সাথে দেখা যায় মহাসাগরের বিস্তীর্ণ নীল জলরাশি এবং অসীম নীল আকাশ, যা সৃষ্টি কর্তার অপার মহিমা প্রকাশ করছে।

মসজিদটি নির্মাণকালে দিনের বেলায় ১৪০০ জন এবং রাতের বেলায় ১১ হাজার নির্মাণ শ্রমিক কাজ করেছে। মসজিদের সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করেছে মরক্কোর খ্যাতিমান ১০ হাজার চারু ও কারু শিল্পী। মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫৮৫ মিলিয়ন ইউরো। এ অর্থ সংগৃহীত হয়েছে মরক্কোবাসীর প্রদত্ত চাঁদা,আরব বিশে^র (কুয়েত, সৌদী আরব)  অনুদান এবং পশ্চিমা দেশগুলো থেকে প্রাপ্ত ঋণ থেকে। মসজিদটি ৬৬০ ফুট লম্বা এবং ৩৩০ ফুট প্রশস্ত। আমরা অসাধারণ এ সুন্দর মসজিদ কমপ্লেক্স ঘুরে দেখলাম, ছবি তুললাম এবং শেষে যোহরের নামাজ আদায় করলাম। নামাজশেষে আমরা গেলাম আটলান্টিকের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেতে। ম্যাকডোনাল্ড রেষ্টুরেন্টে আমরা খাবার খেলামÑ ভাত নয় ফাষ্ট ফুড।

দুপুরের খাবার খেয়ে  আমরা গেলাম সুপার শপ মরক্কো মল-এ। দোকানে দোকানে ঘুরে দেখছি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী। অনেক ভালো ভালো পণ্য। কিন্তু দাম খুবই বেশী। একটি পারফিউমের দোকানে গেলাম। সবই ফ্রান্সের তৈরী। একটি পারফিউম পছন্দ করে দাম জিজ্ঞেস করতে বলল, সিক্সটি ডলার। আমি শুনেছিলাম সিক্সটিন ডলার। এজন্য দুইটা নিতে চেিেছলাম। অবশেষে একটা নিলাম। দোকানীরা খুবই সুন্দরী। তাই ওদের ছবি তলুছি। জানতে চাইলো কেন ছবি  তলুছি। বললাম দেশে গিয়ে লোকজনকে দেখাব আপনারা কত সুন্দর।শুনে শুধুই হাসি। এর পর ফিরে গেলাম হোটেলে বিশ্রামের জন্য। রাত জেগে বিমান ভ্রমন করেছি। আবার রাত জেগে বিমানে যেতে হবে মধ্য আফ্রিকার রাজধানী বাঙ্গুই। বিশ্রাম করতে করতে টিভি ছাড়লাম। গান শুনলাম ডিশ চ্যানেলে। পরিবেশেত হলো নৃত্য। আমাদের দেশের  চেয়েও আধুনিক পরিবেশনা। ইউরোপীয় সংস্কৃতির প্রভাব সুষ্পষ্ট। এজন্যই মরক্কোকে বলা হয় আফ্রিকার ইউরোপ।

রাত ১১টা ৪০ মিনিটে (১২ মে) বাঙ্গুইগামী আমাদের ফ্লাইট। এবারও আমরা যাচিছ রয়াল এয়ার মরক্কোতে চড়ে। রাত ৮টা৩০ মিনিটে আমরা হোটেল থেকে বিমান বন্দরের উদ্দেশে রওয়ানা দেই। রাত ১১টা ৪০ মিনিটে আমাদের বিমান ছেড়ে বাঙ্গুই এম পোকো বিমান বন্দরে পৌছল সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে। এর আগে মধ্য আফ্রিকার প্রতিবেশী দেশ ক্যামেরুনের বানিজ্যিক রাজধানী দোয়ালায় আমাদের বিমান অবতরণ করে। এখানে প্রায় এক তৃতীয়াংশ যাত্রী নেমে যায়। এক ঘন্টা  পরেই বাঙ্গুই বিমান বন্দর। সব মিলিয়ে আকাশ পথে দূরত্ব ৫/৬ ঘন্টা। বিমান বন্দর থেকে সরাসরি চলে যাই ব্যানব্যট ক্যাম্পে। আমাদের থাকার জন্য পিকেÑ১১ হোটেলে রুম ভাড়া করার কথা ছিল। কিন্তু ভাড়া অত্যধিক বেশী হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আমাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো ব্যানব্যাট ক্যাম্পে। এয়ার পোর্ট থেকে তেমন দূরে নয়।

আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে যাই ফোর্সেস হেডকোয়ারটার্সে। সেখানে আমরা দেখা করি জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি লেফটেনেন্ট জেনারেল বাবাকার গায়ে-র সাথে। ইনি সেনেগালের নাগরিক এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ আস্থাভাজন ব্যক্তি। তিনি আমাদেরকে আন্তরিকতার সাথে  তার অফিসে স¦াগত জানান। বাংলাদেশী প্রতিনিধি দলকে কাছে পেয়ে তিনি দারুন উচ্ছ্বসিত। আমাদের শুভেচ্ছা দলের প্রধান মেজর জেনারেল মোঃ সালাহ্ উদ্দিন মিয়াজীর সাথে আন্তরিকতার সঙ্গে মত বিনিময় করলেন। বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের দায়িত্বপরায়নতা, আন্তরিকতা ও পেশদারিত্বে তিনি অত্যন্ত মুগ্ধ। তিনি বলেন, বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা খুবই সুশৃংখল। আর তাদের সবচেয়ে বড় গুণ তারা সাধারণ মানুষের সাথে অতি সহজে মিশতে পারে। সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন মধ্য আফ্রিকায় জাতিসংঘ মিশন মিনুস্কা-র ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার মেজর জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ।

এরপর আমরা দেখা করি মিনুস্কার ফোর্সেস কমান্ডার মেজর জেনারেল মার্টিন চোমু টুমেন্টার সাথে। ইনি ক্যামেরুনের নাগরিক। জেনারেল মার্টিনের মুখেও একই প্রশংসাবাণী।

মিনুস্কা ফোর্স হেড কোয়ারটার্স মধ্য আফ্রিকার রাজধানী বাঙ্গুইতে অবস্থিত। এখানে মোতায়েন আছে নেপাল মিলিটারি পুলিশ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানী, এসএফ কোম্পানী(বাংলাদেশ), এভিয়েশন কোম্পানী(পাকিস্তান), রুয়ান্ডা ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিযন এবং পাকিস্তান ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন। মধ্য আফ্রিকাকে তিনটি সেক্টরে ভাগ করে জাতিসংঘ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সেক্টর ওয়েষ্ট Ñএখানে নিয়োজিত আছে ক্যামেরুন ইনফ্যাটিœ ব্যাটালিয়ন, ব্যানব্যাট, কঙ্গো ইনফ্রান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ও সিগনাল কোম্পানী। সেন্ট্রাল সেক্টর Ñ এখানে নিয়োজিত আছে পাকিস্তান ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন, বুরুন্ডি ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন , কঙ্গো ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ও ব্যানসিগ কোম্পানী( বাংলাদেশ), এবং ব্যানমেড(বাংলাদেশ)। সেক্টর ইস্ট Ñ এখানে মোতায়েন আছে মরক্কো ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ও টিবিসি ব্যাটালিয়ন।

১৪ মে আমরা যাই বোয়ার শহরে। এখানকার লোক সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। আয়তন ৪৫০ বর্গ কিমি। এখানে এন্টি-বালাকার প্রভাব বেশী। তবে অধিকাংশ সাবেক সেলেকা সৈনিকরা এখানে বসবাস করে। এখানে বাংলাদেশ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর অবস্থিত।এটি একটি খুবই অনুন্নত শহর। পাকা বাড়ি ঘর নেই বললেই চলে। বেশীর ভাগ বাড়ি ঘর মাটির তৈরী। এ শহরে স্বাধীনতা স্তম্ভ রয়েছে। এখানে ব্যানব্যাটের বিভিন্ন কার্যক্রমের উপর আমাদের ব্রিফ করা হয়। ব্রিফিংশেষে আমরা মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেই। মধ্যাহ্ণ ভোজে আমনিÍ্রত হয়ে আসেন মিনুস্কার হেড অব অফিসার্স ইয়াসমিনী থিয়ামÑ সেনেগালের নাগরিক। মধ্যাহ্ণ ভোজশেষে তার সাথে কথা হয়। তিনি বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের দয়িত্ব পালনে আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বে মুগ্ধ। তিনি বাংলাদেশীদের অতিথিপরায়নতা ও বন্ধুসুলভ আচরনেরও প্রশংসা করলেন। তার সাথে ফটো সেশনে অংশ নিয়ে জাতিসংঘের বিমানে করে আবার ফিরে আসি বাঙ্গুইতে। আকাশ পথে বিমানে দেড় ঘন্টার পথ।

বাংলাদেশী মহিলা শান্তিরক্ষী

মধ্য আফ্রিকায় মহিলা শান্তিরক্ষী হিসাবে কর্মরত আছেন  বাংলাদেশ  নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লে. কমান্ডার মীর্জা রোকাইয়া নূর এবং লে. কমান্ডার তানিয়া সওগাত। এখানে তারা জাতিসংঘ ফোর্সেস হেডকোয়ার্টারে স্টাফ অফিসার হিসাবে কাজ করছেন। লে. কমান্ডর তানিয়া ইনটেলিজেন্স বিভাগে এবং লে, কমান্ডার রোকাইয়া পারসোনেল বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন।

লে. কমান্ডার তানিয়া ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর মধ্য আফ্রিকায় জাতিসংঘ মিশনে যোগদান করেন। প্রথম নারী কর্মকর্তা হিসাবে এসময় অনেক সমস্যার মুখোমুখী হয়েছেন তিনি। অবশ্য নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতাবলে তিনি তার সমাধানও করেছেন। তার ১৫ দিন পরে এখানে আসেন লে. কমান্ডার মীর্জা  রোকাইয়া নূর।

লে. কমান্ডার তানিয়া বলেন, ” বহুজাতিক বাহিনীতে কাজ করতে ভালোই লাগছে। কোন সমস্যা হচ্ছে না। এখানে আমার বস হচ্ছেন একজন মার্কিন সেনা কর্মকর্তা। তার নাম লে. কর্নেল স্টীভ স্যালট। তার কাছ থেকে আমি অনেক সহায়তা পেয়েছি। তার আন্তরিক সহযোগিতায় আমার কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে যায়।”

লে. কমান্ডার তানিয়ার মূল কাজ, কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট প্রস্তুত করা। তাছাড়া  দুস্কৃতিকারীদের কর্মকান্ড/ গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহও তার অন্যতম কাজ। তার গোয়েন্দা রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীরা তাদের পরবর্তী কর্যক্রমের পরিকল্পনা করেন।

লে. কমান্ডার রোকাইয়ার কাজ অনেকটা প্রশাসনিক পর্যায়ের। তিনি মূলত শানিÍরক্ষী মোতায়েন, রোটেশন, ট্রান্সফার, স্যালারী, ফিনান্স ইত্যাদি কাজ করেন। তিনি বলেন, কাজ করতে কোন সমস্যা হচেছনা। তবে কোন সমস্যা দেখা দিলে ই”্্ছা থাকলে তার সমাধানও করা যায়। তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করতে পারা খুবই আনন্দের ও গৌরবের। তবে তার কষ্টের জায়গাও আছে। তিনি তার ছয় বছরের শিশু সন্তান নায়ীরা ইমতিহালকে ছেড়ে এত দূরে অবস্থান করছেন। তার পরেও তিনি গর্ব বোধ করেন বিশ^ শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে পেরে। তিনি বলেন, মহিলা কর্মকর্তা হিসাবে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কাজ করতে পারা খুবই সম্মানের। তার ওপর দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব শান্তি রক্ষায়  অবদান রাখতে পারা আরো সম্মানের।

ব্যানব্যাটের সিমিক (CIMIC)  কার্যক্রম

উদ্ভ’ত  পরিস্থিতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে মধ্য আফ্রিকায় বিরাজমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটের প্রেক্ষাপটে  মিনুস্কার আওতায় ব্যানব্যাট মোতায়েন করা হয়েছে। ব্যানব্যাট কর্তৃক স্থানীয় জনসাধারণের হৃদয় ও মন জয় করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সিমিক (civil military cooperationÍcimic)  কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার মেজর জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বোয়ার ক্যাম্পে মেডিক্যাল ক্যাম্পিং উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনশেষে  লেভেল -১ হাসপাতাল সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বেসামরিক জনসাধারণকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও বিনামূল্যে ্ওষুধ সরবরাহ করে। বাবুয়া নামক স্থানেও একই রকম কার্যক্রম চালায় লেভেল -– ১ হাসপাতাল। ৬ মার্চ ২০১৫ তারিখে বোয়ার স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয় স্থানীয় নারীদের প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা। এখানে উপস্থিত ছিলেন মিনুস্কার হেড অব অফিসার্স নানা মেমবেরে। স্থানীয় খেলোয়াড়দের উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য তাদের মধ্যে ব্যানব্যাট খেলাধুলা সামগ্রী বিতরণ করে। তাছাড়া এ অনুষ্ঠানের সাবির্ক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে ব্যানব্যাট।

৭ মার্চ ২০১৫ তারখে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে একটি র‌্যালী অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারীদেরকে এসময় গেঞ্জি, মশারী এবং হাইজিন সামগ্রী বিতরণ করা হয় এবং র‌্যালীর  সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া হয়। ১৭ মর্চ ২০১৫ হতে ৪  এপ্রিল ২০১৫ তারিখ পর্যন্ত মেজর মোঃ তারিকুল ইসলামের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বোয়ারে  একটা স্কুলে  ভাষা শিক্ষা কোর্স অনুষ্ঠিত হয়। কোর্সে ২৭ জন ছাত্র/ছাত্রী অংশ গ্রহণ করে এবং ২০ জন উত্তীর্ণ হয়। ৪ এপ্রিল বিকেলে সেক্টর ওয়েষ্টের সেক্টর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এভারিস্তে মুরেঞ্জি উত্তীর্ণদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন।

৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে ব্যানব্যাটের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার কর্নেল শেফাউল কবীর বোসেমবেলে ক্যাম্পে মেডিকেল ক্যাম্পিং উদে¦াধন করেন। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত লেভেল – ১ হাসপাতাল বিনামূল্যে বেসামরিক ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা এবং ওষুধ প্রদান করে।

একজন বেসামরিক জিম্মিকে উদ্ধার

বোয়ালী ক্যাম্পের ৫ কিমি দূরে ১টি বাজারের কাছে আব্দুলাই মামাদু(মুসলিম) নামক এক ব্যক্তি এন্টি বালাকা সদস্যদের রোষানলে পড়ে। এসময় এন্টি বালাকার একজন উপদেষ্টা তাদের হাত থেকে তাকে রক্ষার জন্য তাকে তার বাড়ীতে আশ্রয় দেয়। এন্টি-বালাকা সদস্যরা তাকে মেরে ফেলার জন্য ঐ বাড়ীতে হামলা চালায়। ২০০/২৫০ জন লোক বাড়ীটিকে ঘিরে ফেলে। এসংবাদ পেয়ে  বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী লে. হোসেন রাফিউ আহমেদের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি দল স্থানীয় প্রশাসক মিজ সুপ্রিকে-কে নিয়ে বাজারের নিকটবর্তী ঐ বাড়ীতে গমন করে। এসময় শান্তিরক্ষীদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা শুরু হয়। আশেপাশে ২/৩ রাউন্ড গুলির শব্দও শোনা যায়। লোকজনের মধ্যে কয়েকজনের হাতে অস্ত্র ছিল। শান্তি সেনাদের  সাথে ছিল একটি এপিসি ( আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) এবং একটি পিকআপ। এক পর্যায়ে কয়েকজন  দুস্কৃতিকারী চাকুসহ এপিসিতে উঠে পড়ে এবং সৈন্যদের আক্রমন করতে উদ্ধত হয়। এসময় ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। এর ফলে তারা সরে যায়। এভাবে আব্দুলাই মামাদুকে উদ্ধার করা হয় এবং চিকিৎসার জন্য তাকে বাঙ্গুই হাসপাতালে পাঠানো হয়।

অপারেশন বেকো-২

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মোতায়েনের পর মধ্য আফ্রিকার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হতে থাকে। তবে সাধারণ জনগণের আর্থিক অবস্থা এখনো খুবই খারাপ। দেশে আইনের শাসন নেই। তাছাড়া বিদ্যমান রয়েছে দায়মুক্তির সংস্কৃতি। ফলে ডাকাতি, লুটপাট, মুক্তিপণ আদায় এবং সংখ্যালঘুদেরকে কৃতদাসে পরিনত করার মত ঘটনা ঘটছে। দুস্কৃতিকারীদের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত হতে দেখা যেত ফুলানী সম্প্রদায়ের লোকদের (যাযাবর শ্রেণীর লোক)। বিশেষ করে সেক্টর ওয়েস্টে  এধরনের ঘটনা বেশী ঘটত। ইয়ালোকে শহরের আশেপাশে এধরনের ঘটনা প্রায়ই  ঘটত। এন্টি বালাকা মিলিশিয়াদের  আক্রমনের হাত থেকে সাধারণ বেসামরিক লোকদের রক্ষা করা মিনুস্কা-র অন্যতম প্রধান ম্যানডেট। প্রটেকশন অব সিভিলিয়ান  ম্যানডেটের আওতায় ব্যানব্যাটের একটি সফল অভিযান হলো বেকোÑ২। ব্যানব্যাট সদস্যরা ঐ অভিযানের মাধ্যমে ইয়ালোকে শহরের কাছাকাছি লাম্বি নামক গ্রাম খেকে  ৮মে ২০১৫ তারিখে ৪৩ জনের একটি ফুলানী গ্রুপকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করে।

এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন মেজর জসীম। অভিযানে অংশ নেয় ৪০ জন ব্যানব্যাট সদস্য, মিনুস্কার দুইজন বেসামরিক সদস্য, ইউএনএইচসিআর-এর দুইজন সদস্য এবং ১০ জন মিলিটারি অবজারভার।

প্রয়োজনীয় রেকি এবং সমন্বয় করে অভিযান শুরু করা হয়। মেজর জসীমের নেতৃত্বেৃ সৈন্যদল সকাল ১০টায় লাম্বি স্কুলে পৌঁছায়। মেজর জসীম পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ৩জন জেন্ডারমেরি (গ্রাম পুলিশ)-কে দলে অন্ত’ভর্’ক্ত করেন। তিনি তাদের মোতায়েন করেন অভিযান পথের বিভিন্ন জায়গায় যাতে পথিমধ্যে কোন দুস্কৃতিকারী ঢুকে পড়তে না পারে।

মেজর জসীম তার দলকে দুই ভাগে ভাগ  করেন। একটি দল  লাম্বি বাজারে এস্কটসহ অবস্থান নেয়। অন্যদল  ১১টা ৩০ মিনিটে পায়ে হেঁটে লাম্বি পৌছায। লাম্বি ষ্কুল থেকে ৬ কিমি দূরে জঙ্গলাকীর্ণ এই গ্রাম। দলটি সেখানে পৌছে ফুলানী ও তাদের গবাদি পশুগুলো উদ্ধারের জন্য আলোচনা শুরু করে। এর পূর্বে স্থানটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। কিছু গবাদি পশু ছিল জঙ্গলের ভেতরে। এগুলো সংগ্রহ করতে গেলে কিছুটা গোলযোগ সৃষ্টি হয়। তবে কমান্ডারের হস্তক্ষেপে  পরিস্থিতি শান্ত হয়। এভাবে তারা ৪৩ জন ফুলানীকে উদ্ধার করে লাম্বি বাজারে নিয়ে আসে। এখানে তাদেরকে বহনের জন্য যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। ইতোমধ্যে এখানে এসে হাজির হয়  এন্টি বালাকা গ্রুপের কয়েকজন সদস্য। তারা গবাদি পশুগুলোকে ছিনতাই করে নিতে এসেছে। তবে মেজর জসীম তাদেরকে নিবৃত করতে সক্ষম হন। এখান থেকে ফুলানীদেরকে ইয়ালোকে শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রয়োজনীয় লম্বা ট্রাক না পাওয়ায় গবাদি পশুগুলোকে ঐদিন ইয়ালোকে  শহরে পৌছানো সম্ভব হয়নি। পরের দিনও ট্রাক না পাওয়ায় কমান্ডার তাদেরকে নিয়ে হাটাপথে ইয়ালোকের দিকে যাত্রা শুরু করেন (দূরত্ব ২২ কিমি)। সন্ধ্যায় তারা পৌঁছায় বোসেমবেলে ক্যাম্পে। এখানে রাখালদের প্রয়োজনীয় খাবার এবং থাকার ব্যবস্থা করা হয়। যাত্রাপথেও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

পরের দিন ১০ মে ২০১৫ সিনিয়র হিউম্যানিটারিয়ান কোঅর্ডিনেটর মিজ ক্লেয়ারের সহায়তায় একটি বানিজ্যিক ট্রাকের ব্যবস্থা করা হয়। এবং রাখাল ও ৩৩টি গবাদি পশু ( গরু ও ছাগল) ব্যানব্যাটের নিরাপত্তা প্রহরায় ইয়ালোকে শহরে পৌছে দেওয়া হয়। এভাবে সফলভঅবে অপারেশন বেকো-২  শেষ হয়। বাংলাদেশ ব্যাটালিয়নের পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা, ধৈর্য ও বিচক্ষনতায় কোন রকম হতাহতের ঘটনা এবং জটিলতা ছাড়াই আভিযানটির সফল সমাপ্তি ঘটে।

ব্যানসিগ ব্যানমেড

রাজধানী বাঙ্গুই থেকে ২৪৫  কিমি দূরে সংঘাতপূর্ণ এলাকা কাগাবান্দোরো। ঘন জঙ্গলে ঘেরা ১৬টি অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম এলাকা এটি। এর  আয়তন ৬৭ বর্গ কিমি এবং লোক সংখ্যা ২৮ হাজার। এটি মুসলীম সংখ্যা গরিষ্ঠ এলাকা।পরস্পর বিরোধী সেলেকা এবং এন্টিবালাকা গ্রুপের অবস্থান এখানে। সংঘাতপূর্ণ এ অঞ্চলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন  সিগনালস ও মেডিকেলের ১২৯ জন সেনা সদস্য। মেডিকেল কন্টিনজেন্টে রয়েছেন একাধিক নারী সদস্য। এদের মধ্যে অন্যতম লে. কর্নেল  লুৎফুন্নাহার। বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের পাশাপাশি তিনি জাতিসংঘ সদস্য ও স্থানীয় জনসাধারণকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচেছন। এখানে আরো আছেন মেডিক্যাল অফিসার মেজর শাপলা। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীতে মেয়েরা এগিয়ে আসছে এবং দেশেবিদেশে ভালো করছে। তারা নিজেদের যোগ্যতায় নিজেদের জায়গা করে নিচেছ। তাছাড়া সৈনিক পদেও  মেয়েরা সেনাবাহিনীতে আসছে।

 ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার কর্তৃক নৈশভোজের আয়োজন

 মধ্য আফ্রিকায় জাতিসংঘ ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ শুভেচছা দলের সম্মানে ১৫ মে রাতে নৈশ ভোজের আয়োজন করেন। মধ্য আফ্রিকায় এটাই আমাদের শেষ দিন। আগামীকাল আমরা দেশের উদ্দেশে বাঙ্গুই ত্যাগ করব। বিদায়ী নৈশভোজে কয়েকজন বিদেশী শান্তিরক্ষীকেও নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমনিÍ্রত হয়ে আরো এসেছেন জাতিসংঘ ফোর্সেস হেড কোয়ার্টারে স্টাফ অফিসার হিসাবে কর্মরত  লে. কমান্ডার তানিয়া এবং লে. কমান্ডার রোকইয়া নূর। ব্যানব্যাট ক্যাম্পের সামনের খোলা জায়গায় নৈশ ভোজের আয়োজন।  পাহাড়ঘেরা ক্যাম্পের আঙ্গিনায়   মনোরম সন্ধ্যায় আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি। পারস্পরিক আলাপচারিতা, কথপোকথন এবং নৈশভোজ। যেন একখন্ড বাংলাদেশ।

নৈশভোজ শেষে আয়োজন করা হলো মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। কেউই পেশাদার শিল্পী নয়। তারপরেও নিজস্ব সংস্কৃতির টানে বংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা গাইলো মজার মজার সব গান। দেশাত্মবোধক, আধুনিক ও ব্যান্ড সংগীতের সুর মুর্ছনায় আমরা মুগ্ধ হলাম। সবচেয়ে আকর্ষনীয় ছিল স্থানীয় যুবক আব্দুল আলীমের কন্ঠে বাংলা গান। ও গাইলো ” সাধের লাউ  বানাইলো মোরে বৈরাগী” এই গানটি।

এয়ারপোর্ট ফরমালিটিস শেষ করে ১৬ মে সকাল ৮ টায় আমরা ক্যাসাব্লাংকার উদ্দেশে বাঙ্গুই ত্যাগ করি। এয়ারপোর্টে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে লাগেজ চেক করা হয় । এক এক করে সবকিছু  দেখেন । বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক দামে বামাকো থেকে কিনে আনা কিছু কসমেটিকস পন্য ওরা ্আটকে দিল। এ গুলো হ্যান্ডলাগেজে নেয়া যাবেনা। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশী এক শান্তিরক্ষীর হাতে এগুলো দিয়ে আসি । উনি বললেন ক্উে দেশে গেলে তার মাধ্যমে পাঠিয়ে দেবেন। তাকে আমার মোবাইল নম্বর দিলাম ।ওগুলো আমি ঠিক পেয়েছিলাম ওই শান্তিরক্ষী যখন দেশে আসে তখন । আমাকে ফোন করায় আমি তার কাছ থেকে নিয়ে আসি ।

কাতারের দোহা অত:পর বাংলাদেশ

রয়াল মরক্কো এয়ারে বিকাল সাড়ে পাঁচটায় আমরা ক্যাসাব্লাংকা পৌছাই । দোহাগামী বিমান রাত ৮ টা ১৫ মিনিটে। এবার কাতার এয়ার ওয়েজে চড়ে দোহা পৌছাই ১৭ মে ভোর সাড়ে পাঁচটায় । ১৭ মে পুরোটা দিন এখানে যাত্রা বিরতি । হোটেলে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে আমরা বের হই কাতারের  রাজধানী দোহা ভ্রমণে। হোটেল থেকে বের হওয়ার আগে আমাদের সাথে দেখা করতে আসেন কাতারে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মান্যবর সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকার ।

কাতার একটি উপদ্বীপ।  আমিরের নাম শেখ তামিম বিন মোহাম্মদ আল থানি। এদেশের  মোট লোক সংখ্যা  ২৬ লাখ। এর মধ্যে কাতারি মাত্র ৩ লাখ। বাকি ২৩ লাখ প্রবাসী। কাতার বিশে^ সবচেয়ে বেশী উচ্চ আয়ের দেশ। মাথাপিছু  আয় ৯৬ হাজার মার্কিন ডলার। কাতার ২০২২ সালে অনুষ্ঠিতব্য ফিফা বিশ^ কাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ। এ উপলক্ষে কাতার জুড়ে চলছে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড।

দোহা খুবই আধুনিক শহর । লোক জন একেবারেই কম।সড়কে যাত্রীবাহী কোন বাস নেই । শুধু কার,জীপ ও মাইক্রোবাস। বোরকাপড়া মহিলাদেরকেও কার ড্রাইভ করতে দেখা যাচ্ছে। কোন যানজট নেই । শুধু গাড়ী আর সুরম্য আধুনিক অট্টালিকার নগরী দোহা পারস্য উপসাগরের তীর ঘেষে গড়ে উঠেছে ।

আমরা গিয়ে বসলাম পারস্য উপসাগরের লেগুনের তীরে। উপসাগর থেকে ভেসে আসছে ঝির ঝির বাতাস। লেগুনের তীরে গড়ে ওঠা আকাশছোঁয়া ভবন গুলো স্বপ্নের মত লাগছে। পাশেই কাতারের আমিরের সরকারি অফিস ভবন। দুপুরের খাবার খেলাম ভূইয়া রেষ্টুরেন্টে। প্রবাসী বাঙালী অহিদ ভূইয়ার বাংলা রেষ্টুরেন্ট এটি। বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড দেখে আলাদা রকম ভাল  লাগল । আমাদের পরিবেশন করা হলো সাদা ভাত,শূঁটকি ভর্তা, সব্জী, হামর মাছ এবং ডাল। বাংলাদেশী খাবার । হামর মাছ খুবই  সুস্বাদু। এটি পারস্য উপসাগরের মাছ।

ভ’ইয়া রেষ্টুরেন্টে আমাদের সাথে দুপুরের খাবারে শামিল হয়েছিল কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশী তরুন সাংবাদিক। তারা আপেল মাহমুদের সাথে বেশ আলাপ জমায়। একজন বলল, আপনারা আসবেন এটা আগে থেকে জানলে আপনাদের  গ্র্যান্ড রিসেপশন দিতাম। খাওয়ার পর আপেল ওদের সাথে দোহা নগরী দেখতে বের হয়ে গেল।

আমাদের শুভেচ্ছা দলের নেতাসহ আমরা গেলাম রিং রোডে অবস্থিত শপিং মল লুলু হাইপার মার্কেটে শপিং করার উদ্দেশ্যে। আমাদের গাইড করছেন দোহায় নিযুক্ত বাংলাদেশের একজন দূতাবাস কর্মকর্তা। অজ¯্র পণ্য সামগ্রী সাজানো স্তরে স্তরে। বিক্রয়কর্মী তরুন তরুনীরা প্রায় সবাই প্রবাসী। কিছু গিফ্ট আইটেম কিনলাম। দাম সহনশীল। তবে মনে শঙ্কা ছিল বাঙ্গুই এয়ারপোর্টের মত  আবার না আটকে দেয়। না, এবার দোহা এয়ারপোর্টে কিছুই আটকায়নি। ডিজিটাল চেকিং পার হয়ে আমরা সবাই হ্যান্ড লাগেজ নিয়ে বিমানে আরোহণ করি।

রাত ৮টায় আমাদের বিমান কাতার এয়ার ওয়েজ ঢাকার উদ্দেশে দোহা ত্যাগ করে। বিমানে ওঠার পর আমাদের রাতের খাবার দেওয়া হল। খাবার শেষে কেউ কেউ সীটে হেলান দিয়ে একটু ঘুমিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে । রাত জেগে আমাদের বিমান ভ্রমণ করতে হবে। পাশের রোতে সামনে এক মহিলা যাত্রী এবং তার পেছনে এক পুরুষ যাত্রী। মহিলা যাত্রী এমন ভাবে তার সীট ছেড়ে দিল সেটা গিয়ে লেগে গেল পেছনের পুরুষ যাত্রীর হাঁটুতে। পুরুষ যাত্রীটি ক্ষেপে গিয়ে মহিলার সীট ধরে ঝাঁকুনী দিল। প্রতিক্রিয়ায় মহিলা বলে উঠল Ñ you are an idiot. বুঝতে পারলাম বাঙালী পারিপাশির্^কতায় চলে এসেছি। দোহা, মরক্কো, বামাকো,বাঙ্গুই ভ্রমণে এরকম ঘটনা এই প্রথম।

ভোর চারটায় আমাদের বিমান ঢাকায় অবতরণ করে। বাংলাদেশে প্রবেশের পূর্বে উত্তর আকাশে  বিদ্যুৎ চমকানো ও কালো মেঘ দেখে মনে হলো ঢাকায় হয়তো বৃষ্টি হচ্ছে । আপেল বলল, ঐ মেঘ ঢাকার আকাশে নয়. হয়তো আসাম মেঘালয়ে হবে। ওর কথাই ঠিক হলো। আমাদের বিমান যখন অবতরণ করে তখন ঢাকায় চমৎকার আবহাওয়া। তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ইংরেজী ও বাংলায় ঘোষনা করা হলো। অনেক দিন পর এই বাংলায় ঘোষনা শুনলাম। এত দিন ঘোষনা শুনেছি  ইংরেজী, ফরাসী ও আরবীতে।

 

মোবাইল : ০১৭৬৯০১৭১৯৬

E-mail : nihabib@gmail.com

সম্পর্কিত পোস্ট