ঢাকা, ০১ মার্চ ২০২২: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন United Nations Interim Security Force for Abyei (UNISFA) এলাকায় মোতায়েনের উদ্দেশে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি কন্টিনজেন্টের ১৬০ সদস্যের ১ম দল আজ মঙ্গলবার (০১-০৩-২০২২) ঢাকাস্থ হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর ত্যাগ করে। কন্টিনজেন্ট এর অন্যান্য দলসমুহ পর্যায় ক্রমে পরবর্তী কয়েকটি ফ্লাইটে শান্তিরক্ষা মিশন আবেই এলাকায় গমণ করবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই কন্টিনজেন্টটি নতুনভাবে সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যবর্তী বিশেষ প্রশাসিত এলাকা আবেই-তে মোতায়েন হতে যাচ্ছে। United Nations Interim Security Force for Abyei (UNISFA) মিশনের সীমান্ত পর্যবেক্ষণ মেকানিজম (JBVMM) এর অংশ হিসেবে তিন দশকের বেশি সময় ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই কন্টিনজেন্ট বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে সরাসরি অপারেশন এলাকায় জরুরী মোতায়েন করা হচ্ছে।
ব্যাটালিয়ন এর মুল দায়িত্ব হচ্ছে মিশনের JBVMM সেক্টর এবং টিম সাইটসমুহের সুরক্ষা প্রদান করা। কেবলমাত্র মৌলিক অস্ত্র সরঞ্জামাদি নিয়ে অপারেশন এলাকায় স্বল্পতম সময়ে মোতায়েন আমাদের শান্তিরক্ষী মিশনে একটি নতুন সংযোজন। বিরুপ আবহাওয়া, ভৌগলিক দূরত্ব এবং ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখেও বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অবদান চলমান রয়েছে। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের আহবানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অত্যন্ত দ্রুততার সাথে এই কন্টিনজেন্টকে প্রস্তুত করেছে এবং অপারেশনাল এলাকায় নিয়োগের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এই কন্টিনজেন্টের ২য় দল (১২০ জন) আগামী ০৪ মার্চ ২০২২ এবং অবশিষ্ট দল (সর্বমোট ৫১২ জন) সম্ভাব্য এপ্রিল মাসে মোতায়েন হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন মিশনে আমাদের জনবল এবং সরঞ্জামাদি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মধ্যে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে লাইট কুইক রিয়েকশন ফোর্স ও স্পেশাল ফোর্স কোম্পানীর ৫০ জন জনবল বৃদ্ধি ও একটি লেভেল-২ হাসপাতাল (৬৯ জন), মালি-তে একটি মেকানাইজ ইনফেন্ট্রি কোম্পানী-কুইক রিয়েকশন ফোর্স (২৬৬ জন) মোতায়েন হতে যাচ্ছে। কঙ্গোতে একটি এক্সপ্লোসিভ অর্ডন্যান্স ডিসপোসাল প্লাটুন (৩৬ জন) মোতায়েনের অনুরোধ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে আমাদের আরো একটি পদাতিক ব্যাটলিয়ন, হেলিকপ্টার ইউনিটকে মোতায়েন প্রস্তুতির উচ্চতর স্তরে রাখার সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ সদর দপ্তর এবং বিভিন্ন মিশনের নেতৃত্ব স্থানীয় পদে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ন পদায়নও বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মধ্যে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে চীফ অফ স্টাফ (ডি-১), দক্ষিণ সুদান ও আবেই’তে একজন করে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার ও বিভিন্ন মিশনে ০৪ জন সেক্টর কমান্ডার পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই সমস্ত অর্জনের নেপথ্যে রয়েছে সেনা সদস্যদের আন্তরিকতা, নিরলস পরিশ্রম, উন্নত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম, ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা ও আত্মত্যাগ। উন্নত পেশাদারিত্ব ও ক্রমাগত সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অর্জিত সুনাম ও আমাদের পতাকা সমুন্নত রাখতে এবং দেশের সম্মান ও গৌরব বজায় রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
উল্লেখ্য, অনেক দিন ধরে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী (Top TCC) অবস্থানে রয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় মিশন কন্টিনজেন্টগুলোকে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদিতে সজ্জিত করা সম্ভব হয়েছে। সাম্প্রতিককালে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণে শান্তিরক্ষী মিশনের গুরুত্ব এবং এতে পেশাদারিত্ব ও আত্মত্যাগ প্রদর্শনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, ওএসপি, এনডিইউ, পিএসসি, পিএইচডি এর অভিজ্ঞ নির্দেশনা, সামরিক কূটনীতি এবং দক্ষ নেতৃত্বের ফলই হচ্ছে এ ধরণের জরুরী মোতায়েনে সেনাবাহিনীর সক্ষমতা অর্জন।