খুলনা, ০৪ ডিসে¤¦র ২০১৭ঃ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২০১৭-বি ব্যাচের ৭৭৫ জন নবীন নাবিকের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ আজ সোমবার (০৪-১২-২০১৭) খুলনাস্থ নৌ ঘাঁটি বানৌজা তিতুমীর প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ (Admiral Nizamuddin Ahmed), এনবিপি, ওএসপি, বিসিজিএম, এনডিসি, পিএসসি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও আর্কষণীয় মার্চপাস্টের সালাম গ্রহণ করেন। পরে, তিনি কৃতি নবীন নাবিকদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করেন।
নৌবাহিনীর ২০১৭-বি ব্যাচের নবীন নাবিকদের মধ্যে শেখ মোহাম্মদ রাসেল, ডিই/এমএ-২/ইউটি পেশাগত ও সকল বিষয়ে সেরা চৌকস নাবিক হিসেবে ‘নৌ প্রধান পদক’ লাভ করেন। এছাড়া মোঃ হোসাইন, ডিই/ইউসি/ইউটি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ‘কমখুল পদক’ এবং মোঃ মাহমুদুল হাসান, ডিই/ইউসি/ইউটি তৃতীয় স্থান অধিকার করে ‘তিতুমীর পদক’ লাভ করে।
নৌ প্রধান নবীন নাবিকদের উদ্দেশ্যে তাঁর ভাষণে, মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর অসামান্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স¥রণ করেন। সেইসাথে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বীর নৌসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা গভীরভাবে স¥রণ করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা এবং পরবর্তীতে তাঁর সুযোগ্য উত্তরসুরী বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশের ক্রমাগত অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সামরিক বাহিনী এবং সকল ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। পাশাপাশি নৌবাহিনী আজ বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ নৌবাহিনীতে রূপান্তরিত হতে চলেছে।
তিনি বলেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে নৌবাহিনীকে একটি আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়ে নৌবহরে যুক্ত হয়েছে সর্বোচ্চ সংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফ্ট, হেলিকপ্টার ও বিশেষায়িত ফোর্স সোয়াড্স। এছাড়া, আরও দু’টি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফ্ট ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া চলতি বছরে মার্চে দু’টি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এখন ত্রিমাত্রিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া, পটুয়াখালীর রাবনাবাদ এলাকায় নৌবাহিনীর একটি নৌ-ঘাঁটি, ঢাকার খিলক্ষেতে একটি পূর্ণাঙ্গ নৌ ঘাঁটি এবং চট্টগ্রামের পেকুয়ায় একটি সাবমেরিন ঘাঁটির নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নৌবহরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্রমান¡য়ে পুরাতন জাহাজগুলিকে প্রতিস্থাপনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় গত ০৮ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মহামান্য রাষ্ট্রপতি খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত দু’টি লার্জ পেট্রোল ক্রাফ্ট বানৌজা দুর্গম ও বানৌজা নিশান এবং দু’টি সাবমেরিন টাগবোট বানৌটা হালদা ও বানৌটা পশুর কমিশনিং করেন। এছাড়া, নবীন নাবিক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণের মান ও অন্যান্য সুবিধাদি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়েছে বলে তিনি উল্লে¬খ করেন। তিনি বলেন, স্কুলটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য একটি মানসম্পন্ন ১০তলা বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস ভবনের নির্মাণ কাজ খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
পরিশেষে, তিনি নবীন নাবিকদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান দ্বায়িত্বে নিজেদের আত্মনিয়োগ করার পরামর্শ দেন। একইসাথে তিনি প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে যোগ্য নাবিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং সেই শিক্ষাকে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে ব্যবহার করে জাতীয় নিরাপত্তা ও অগ্রগতির পথে সঠিকভাবে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।
মনোজ্ঞ এ কুচকাওয়াজে অন্যান্যের মধ্যে খুলনার সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য জনাব তালুকদার আব্দুল খালেক, সহকারী নৌবাহিনী প্রধান (অপারেশ›স), খুলনা নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার, খুলনা ও যশোর এলাকার পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিকবৃন্দ এবং নবীন নাবিকদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।