ঢাকা, ৪ ডিসেম্বরঃ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুইজন নারী বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুৎফী প্রথমবারের মত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসে এক নতুন মাইল ফলক স্থাপন করেছে। তারা জাতিসংঘ মিশন কঙ্গোতে যোগদানের উদ্দেশ্যে আগামী ০৭ ডিসেম্বর ঢাকা ত্যাগ করবে। তারা কঙ্গো শান্তি মিশনে এক বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন । ঢাকা ত্যাগের পূর্বে জাতিসংঘ মিশনে যোগদানের উপর তাদের মতামত আজ সোমবার (০৪-১২-২০১৭) ঢাকা সেনানিবাসস্থ ঘাঁটি বাশারে সাংবাদিকদের নিকট উপস্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, যোগ্যতা ও মেধা সম্পন্ন যে কেউ সামরিক বাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় আসতে পারেন এবং এখানে মেধা বিকাশের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী বিধায় সর্বক্ষেত্রে নারীর সম-অংশগ্রহণই নিশ্চিত করতে পারে দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ২০০০ সালে সর্বপ্রথম সামরিক বাহিনীতে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ শুরু করে। সময়ের পরিক্রমায় বিমান বাহিনীর বিভিন্ন শাখার নারী কর্মকর্তারা বিমান বাহিনী ছাড়াও জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গণে পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রথমবারের মত ২জন নারী বৈমানিককে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ দিয়েছে ।
সামরিক বৈমানিক এর মত চ্যালেঞ্জিং ও ঝুকিপূর্ণ পেশায় নারী বৈমানিকদের গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যাচাই বাছাই-এর পর বিমান বাহিনীতে কর্মরত দুইজন নারী কর্মকর্তা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুৎফি মনোনিত হন উড্ডয়ন প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ১৮ নং স্কোয়াড্রনে বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে বেসিক কনভার্সন কোর্সের জন্য মনোনিত হওয়া এই দুই নারী কর্মকর্তা গত ০৩ আগস্ট ২০১৪ তারিখ হইতে তাদের গ্রাউন্ড প্রশিক্ষণ শুরু করেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে প্রথমবারের মত তাদের উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ শুরু করেন। পরবর্তীতে ২৫ ঘন্টা সফল প্রশিক্ষণ উডডয়ন শেষে তারা একক উড্ডয়ন তথা প্রথম একক উড্ডয়ন (SOLO Flight) সম্পন্ন করেন। এভাবে উক্ত নারী কর্মকর্তা ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে তাদের প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ন ধাপ অতিক্রম করে বৈমানিক হয়ে ওঠার প্রাথমিক পর্যায় শেষ করেন।
প্রশিক্ষণরত এই বৈমানিকদ্বয় বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে ৬৫ ঘন্টা উড্ডয়নের প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করার পর পরবর্তীতে বিমান বাহিনীর বিভিন্ন হেলিকপ্টার স্কোয়াড্রনে দায়িত্ব পালন করেন। তারা ২০৬ হেলিকপ্টার কনভারশন কোর্স, এমআই-১৭, এমআই-১৭১ এবং এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেছেন। তারা ভারত থেকে এভিয়েশন মেডিসিন-এ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তারা দুজনই পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন্স উত্তরনে অপারেশনাল পাইলট হিসেবে দায়িত্ব করেছেন।
পেশাগত জীবনে বৈমানিক হিসেবে তাদের এই সাফল্য বিমান বাহিনী এবং বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উড্ডয়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। বিমান বাহিনীর এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও বাংলাদেশের মেয়েদের অগ্রযাত্রায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে । দেশের গন্ডি পেরিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের যোগদান বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসে এক গৌরব উজ্জল অধ্যায়ের সূচনা করেছে।