নরসিংদী, ০৩ ডিসেম্বরঃ- বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর কলেজ’ এর সর্বাঙ্গীন উন্নতির লক্ষ্যে মঙ্গলবার ০৩-১২-২০১৯ তারিখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পক্ষে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন) এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে এম আহ্সানুল হক, বিএসপি, এনডিইউ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি কলেজ কর্তৃপক্ষকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার চেক হস্তান্তর করেন। চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিমান বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ, কলেজ কর্তৃপক্ষসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের আত্মতেগের মাধ্যমে দেশ প্রেমের যে উদাহরণ আমাদের জন্য রেখে গেছেন, তাঁর নামানুসারে স্থাপিত ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর কলেজ’ শুধুমাত্র দেশে শিক্ষার প্রসারই নয় বরং মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করবে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহŸানে সাড়া দিয়ে বাংলার আপামর জনগণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিমান বাহিনীর যে সকল সদস্য বাংলাদেশের মহান মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য।
বাঙালিদের উপর পাকিস্তানিদের বৈষম্য মূলক আচরণ ও অমানবিক অত্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ এবং গভীর দেশপ্রেম বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানকে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করে। পেশাগত কারণে সে সময় তিনি স্ব-পরিবারে পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থান করছিলেন। কেবলমাত্র সুতীব্র্র দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের পরিবারের উপর নিশ্চিৎ বিপদ নেমে আসতে পারে জেনেও তিনি তার স্ত্রী ও কন্যাকে পাকিস্তানে রেখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সে লক্ষ্যেই তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একটি টি-৩৩ বিমান ছিনতাই করার পরিকল্পনা করেন। পাকিস্তানের করাচিস্থ মাসরুর বিমান ঘাঁটি হতে বিমানটি যখন উড্ডয়ন করে তখন বিমানটি চালাচ্ছিলেন তারই ছাত্র পাইলট অফিসার মিনহাজ রশিদ। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিমানটি ছিনতাইয়ের লক্ষ্যে বিমানটি থামতে নির্দেশ দিলে পাইলট অফিসার মিনহাজ রশিদ বিমান থামালে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান তার মুখে ক্লোরোফর্ম জাতীয় কিছু চেপে ধরে তাকে অজ্ঞান করে এবং বিমানের কন্ট্রোল নিজের কাছে নিয়ে নেয়।
বিমানটি ছিনতাই করে আনার পথে পাইলট অফিসার মিনহাজ রশিদের জ্ঞান ফিরলে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের সাথে তার ধস্তাধস্তি হয় এবং ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ২০ আগস্ট ১৯৭১ তারিখে ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি থাট্টা নামক স্থানে জাতির এই সূর্য সন্তান বিমান দুর্ঘটনায় শাহাদাত বরণ করেন। পরবর্তীতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের মরদেহ পাকিস্তানের করাচিস্থ মাসরুর বিমান ঘাঁটির ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। এরপর ২০০৬ সালের ২৪ জুন তারিখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সার্বিক সহযোগীতায়, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের পরিবার এবং তৎকালীন সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের দেহাবশেষ দেশে আনা হয় এবং পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় মিরপুরের শহিদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতির এই গর্বিত সন্তানের জন্মস্থান নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলাধীন রামনগর গ্রামটিকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর’ নাম করণ করেন। এছাড়াও, উক্ত এলাকার শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে গত ০৬ জুলাই ২০০৯ তারিখে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর গ্রামেবীর শ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের নামে ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর কলেজ’এর যাত্রা শুরু হয়। এ কলেজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।