ঢাকা, ১১ এপ্রিল ২০২১: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আয়োজনে ঢাকা সেনানিবাসস্থ মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে আজ রবিবার (১১-৪-২০২১) দেশীও বিদেশী সামরিক এবং বেসামরিক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণে ‘আর্মি চিফ’স কনক্লেভ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, এমপি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশত বার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে আয়োজিত বহুজাতিক সামরিক অনুশীলন ‘শান্তির অগ্রসেনা’ এর অংশ হিসেবে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল ফিউচার ট্রেন্ড অব গ্লোবাল কনফ্লিক্ট: রোল অফ ইউ এন পিস কিপারস্। আলোচনায় কি-নোট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ (General Aziz Ahmed), ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এম এম নারাভানে (General MM Naravane) ভুটান সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অপারেশন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দরজি রিনচেন (Darji Rinchen), ফোর্স কমান্ডার ইউনাইটেডন্যাশন স্মালটি ডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন মালি লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডেনিস জিলেনসপোরে (Dennis Gyllensporre) এবং ফোর্স কমান্ডার ইউনাইটেড ন্যাশনস মালটি ডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন দ্যা সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিজিয়ন লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিদকি ড্যানিয়েল ত্রাওর (Sidki Daniel Traore)।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, অরাষ্ট্রীয় শক্তির উত্থান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, রাজনৈতিক সংকট এবং পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত অবস্থানের কারণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশন ক্রমশই চ্যালেঞ্জিং এবং জটিল হয়ে পড়ছে।
বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শান্তি রক্ষীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, কমিউনিটি-বেজড ইনফর্মেশন শেয়ারিং, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, জাতিসংঘ সনদের পরিমার্জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক অব কাঠামো তৈরীর উপর জোর দেন ।
ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল এম এম নারাভানে (General MM Naravane), জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের বর্তমান চ্যালেঞ্জ সমূহ তুলে ধরে তা মোকাবেলায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, জাতিসংঘের মতবাদের নমনীয়তা, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, যথোপযুক্ত লজিস্টিকস সহায়তা নিশ্চিত করণ এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাজেট বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, এমপি বিশ্বব্যাপী শান্তিও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, উন্নত প্রযুক্তি ও অত্যাধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিরূপ প্রয়োগ এবং চলমান বৈশ্বিক মহামারীর কারণে শান্তিরক্ষার প্রকৃতি রূপান্তরিত হয়েছে। এই নজিরবিহীন বৈশ্বিক মহামারীর ফলে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অর্থবহ পারস্পরিক সহযোগিতা, নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিএবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জরুরী অবস্থার উন্নয়ন অতীব প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
সেমিনারে নৌ ও বিমান বাহিনীর এবং বাংলাদেশ পুলিশ এর উর্ধতন কর্মকর্তাগন, কুটনৈতিক ও সিনিয়র সম্পাদক/সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে অংশগ্রহণকারীগণ এবং উপস্থিত অতিথিবৃন্দ আগামী দিনগুলোতে বিশ্বে বিভিন্ন সংঘর্ষ মোকাবেলায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মত বিনিময় করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানএর জন্মশত বার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অন্যতম প্রধান সহযোগী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক আয়োজিত এই সেমিনার ভবিষ্যতে বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলে সকলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।