ঢাকা, ২৩ মার্চ:- ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও বীরত্বপূর্ণ অবদান এবং দেশ গঠনে প্রশংসনীয় ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনী স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার (২৩-০৩-১৭) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার, বিবিপি, এনডিসি, এসিএসসি এর হাতে এই স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১৭ তুলে দেন।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে ও মাতৃভূমির ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালী বিমান বাহিনী কর্মকর্তা ও বিমানসেনাগণ পাকিস্তান বিমান বাহিনী ত্যাগ করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজস্ব কোন বিমান বা বিমান বাহিনী না থাকায় দেশের প্রয়োজনে কর্মকর্তা ও বিমানসেনাদেরকে জল ও স্থল পথে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ছাড়াও সেক্টর/সাবসেক্টর কমান্ডারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে। যুদ্ধের দিনগুলো যতই অতিবাহিত হচ্ছিল যুদ্ধ জয়ের জন্য একটি স্বতন্ত্র বিমান বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা ততোই অনুভূত হতে থাকে। এরই পটভূমিকায় মাত্র ০৯ জন বৈমানিক, ৩৮ জন বিমানসেনা এবং ০৩টি অসামরিক বিমান নিয়ে ১৯৭১ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে গঠিত হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। অসামরিক বিমানগুলোকে নিজেদের অভিজ্ঞতা আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সামরিক বিমানে রুপান্তরিত করা হয়। পরবর্তীতে কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় এবং নারায়নগঞ্জের গোদানাইলে অবস্থিত তেলের ডিপোতে যথাক্রমে অটার এবং এ্যালুয়েট হেলিকপ্টার দিয়ে ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ মধ্যরাতে সফল অভিযান চালানো হয়। ১৯৭১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত অটার বিমানের মাধ্যমে ০৬টি এবং এ্যালুয়েট হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ৪৪ টি সহ মোট ৫০টি বিমান অভিযান সাফল্যের সাথে পরিচালনা করা হয়। এর ফলে শত্র“র অপারেশনাল কার্যক্রমের সক্ষমতাসহ যুদ্ধ পরিচালনার মনোবল হ্রাস পায় যা আমাদের মহান বিজয় অর্জনকে তরান্বিত করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরত্বসূচক অবদান এবং আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ০১ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ০৬ জন বীর উত্তম, ০১ জন বীর বিক্রম এবং ১৫ জন সদস্যকে বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত করা হয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রায় ৬৮৩ জন সদস্য প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন, এদের মধ্যে ০৬ জন কর্মকর্তা এবং ৪৪ জন বিমানসেনা শাহাদাত বরণ করেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ এবং চিকিৎসা সেবা সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সকল সময়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষতঃ ভয়াবহ বন্যা, পার্বত্য চট্টগ্রামের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাসহ অন্যান্য সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দুর্গত মানুষের সাহাযার্থে বিভিন্ন দেশে ত্রাণ ও চিকিৎসা সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে থাকে। বিশ^ শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অঙ্গিকার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ১৯৯৩ সাল থেকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে যা বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বাংলাদেশের সুনাম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করছে।