বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, উপসিহত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সম্মানিত সদস্যবৃন্দ ও উপসিহত সুধি-আসসালামু আলাইকুম।
১। অপারেশন টোয়াইলাইট এর ঘটনাবলী, অগ্রগতি ইত্যাদি সম্মন্ধে আমরা বিগত ৩ দিন আপনাদেরকে অবহিত করেছি। আপনারা জানেন গত ১৫ মার্চ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা চট্রগ্রামের সীতাকুন্ডে একটি সফল জঙ্গি বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। ঐ অভিযানে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে তারা চিহিুত করে যে, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের শিববাড়ী পাঠানপাড়া সড়কের পাশে অবসিহত কোন এক বাড়ীতে জঙ্গিরা লুকিয়ে আছে। গত ২৪ মার্চ রাত আনুমানিক দেড়টার সময় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এলাকাটি ঘিরে ফেলে। রাত আনুমানিক সাড়ে চারটায় তারা নিশ্চিত হন যে “আতিয়া মহল’ নামক পাঁচতলা বাড়ীর নীচতলার একটি ফ্লাটে জঙ্গিরা অবসহান করছে। অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশ সদস্যরা সাথে সাথে আতিয়া মহলের নীচ তলার ছয়টি ফ্লাট বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয় এবং ভবনের মূল প্রবেশ পথের কলাপসিবল গেটটি বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দেন। একই সাথে ভবনটি সকল দিক থেকে ঘিরে ফেলে।
২। পাঁচ তলা বাড়িটির প্রতি তলায় ছয়টি করে মোট ত্রিশটি ফ্লাট আছে। ঘটনার সময় আঠাশটি ফ্লাটে বাসিন্দারা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছিলেন। জঙ্গিরা পুলিশ বাহিনীর উপসিহতি বুঝতে পেরে তাদেরকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে মারে।
৩। সিলেট পুলিশ বাহিনী জঙ্গিদের সক্ষমতা ও আঠাশটি পরিবারের নিরাপত্তা ঝুকি বিবেচনা করে তাদের বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন SWAT এর সহায়তা কামনা করে এবং বাড়িটিকে নিচ্ছিদ্রভাবে ঘিরে রাখে। এ সময়ে ভবনের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে নিজ নিজ ফ্লাটে দরজা জানালা বন্ধ করে যতটুকু সম্ভব নিরাপদে থাকার চেষ্টা করেন। ইতোমধ্যে জঙ্গিরা তাদের ফ্লাটের দরজা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে এবং ভবনের মূল ফটকে বিশাল আকৃতির বিস্ফোরক সহাপন করে। এমনকি একটি ফ্রিজ ও মটর সাইকেলেও বিস্ফোরক লাগিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে। এছাড়া পুরো ভবনের সিঁড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরক সহাপন করে পুরো ভবনটিকে অতিমাত্রায় বিপদজনক করে ফেলে।
৪। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে পুলিশের SWAT এর সদস্যরা ২৪ মার্চ আনুমানিক বিকাল চারটার সময় অপারেশন এলাকায় উপসিহত হন। SWAT এর সদস্যরা তাদের পর্যবেক্ষণ, পরিকল্পনা ও বিচার বিশ্লেষন শেষে বাসিন্দাদের নিরাপত্তা, বিস্ফোরক ঝুঁকি ইত্যাদি বিবেচনা করে সেনাবাহিনীর সহায়তা কামনা করেন।
৫। পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে সেনাবাহিনী অপারেশনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে। ১৭ পদাতিক ডিভিশন ও বিশেষায়িত কমান্ডো দল পরদিন অভিযান শুরত করে। উপসিহত পুলিশ বাহিনীর নিকট থেকে জানা যায় যে, ভবনের নীচ তলায় তিন জন পুরতষ ও একজন মহিলা সহ মোট চার জন জঙ্গি বিপুল পরিমান বিষ্ফোরকসহ অবসহান করছে। একই সময়ে ঢাকা হতে বিশেষায়িত একটি দলকে হেলিকপ্টার যোগে সিলেটে অানা হয়।
৬। মাননীয় প্রধানমমএীর সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনার আলোকে সেনাবাহিনী অপারেশন পরিকলপনা প্রনয়ন করে। অপারেশনে মুলত দুটি Priority নির্ধারন করা হয় প্রথমত, ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া, দ্বিতীয়ত, জঙ্গিদের নির্মূল করা।
৭। অপারেশনের প্রথম পর্বটি ছিল সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ। কমান্ডোরা তাদের জীবন বাজি রেখে অত্যমত সাহসিকতার সাথে অভিনব কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ২৫ মার্চ আনুমানিক দুপুর একটার মধ্যে ভবন থেকে ৩০ জন পুরতষ, ২৭ জন মহিলা ও ২১ জন শিশুসহ মোট ৭৮ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করে। মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে ও দেশবাসীর দোয়ায় এ পর্বটি অত্যমত সফলভাবে শেষ হয়। এ সময়ের বৈরী আবহাওয়া অপারেশন সফলভাবে শেষ করার জন্য নিয়ামক হিসাবে কাজ করে। পুরো ভবনের পাঁচতলা থেকে দোতলা পর্যমত উদ্ধার কাজ অত্যমত সমেতার্পণে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। নিচতলার উদ্ধার অভিযান ছিল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ন । কমান্ডো সদস্যরা অত্যমত সাহসিকতার সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অভিনব পমহা অবলম্বন করে সকল বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে আনে।
৮। এরপর অভিযান দল তাদের দ্বিতীয় পর্বের তথা জঙ্গিদের নির্মুলের কার্যত্রুম শুরত করে। এ পর্বে সেনাবাহিনীর কমান্ডোদের পাশাপাশি সণাইপার দল এপিসিসহ বিশেষায়িত অনেক সদস্য নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন। তিন দিন একটানা বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ২৭ মার্চ বিকেলের মধ্যে চার জন জঙ্গিকে নির্মুল করা হয়। মূলত গতকালই অভিযান শেষ হয়। তবে আরও বিশদ তল্লাসি ও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আজকের দিনটি ব্যবহার করা হয়ে। গতকাল দুটি মৃতদেহ বের করে পুলিশ প্রশাসনের নিকট হসতামতর করা হয়। বাকি যে দুটি মৃতদেহ ছিল সেগুলো সুইসাইডাল ভেষ্টসহ থাকায় অত্যমত ঝুঁকিপূর্ন অবসহায় ছিল। নিরাপত্তা বিবেচনায় ও পুলিশ প্রশাসনের পরামর্শে ঘটনাসহলেই এগুলোর বিস্ফোরণ করা হয়। বিস্ফোরেনের আগে প্রয়োজনীয় ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করা হয়। সকল কার্যত্রুম শেষে আজ বিকালে ভবনটি ত্রুাইমসিন হিসেবে পুলিশ প্রশাসনের নিকট হসতামতর করা হয় এবং “অপারেশন টোয়াইলাইট’ এর সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়।
৯। এই পুরো অপারেশন পরিচালনায় পুলিশ, র্যাব, SWAT, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংসহা, সহানীয় প্রশাসনসহ এলাকাবাসী যে সহায়তা করেছেন তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। অপারেশন টোয়াইলাইট যে কোন Crisis মোকাবেলায় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টার একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে সেনাবাহিনী বিশ্বাস করে।
১০। অপারেশন চলাকালীন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা ও পেশাদারিত্ব আমাদের অপারেশন পরিচালনায় সহায়ক হয়েছে। এ জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সর্বোপরি, মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত ও দেশবাসীর দোয়ায় এ ধরনের একটি অত্যমত ঝুকিপূর্ণ অভিযানে অংশগ্রহণকারী সদস্যরা কোন ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া সম্পন্ন করতে পেরেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের যে কোন বিপদ সংকুল পরিসিহতি মোকাবেলায় অতীতের ন্যায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রসওুত। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের সহায় হোন।
সকলকে ধন্যবাদ। আসসালামু আলাইকুম ।