ঢাকা, ০৩ জুলাই ২০২২: সেনা কল্যাণ সংস্থার সুবর্ণজয়ন্তী ও ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ রবিবার (০৩-০৭-২০২২) ঢাকার মহাখালীস্থ সেনা কল্যাণ সংস্থায় আড়ম্বরপূর্ণভাবে উদযাপন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, এসবিপি, ওএসপি, এনডিইউ, পিএসসি, পিএইচডি। সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে তিনি সেনা কল্যাণ সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে (এসকেএস টাওয়ার) পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় তিনি এসকেএস টাওয়ারের ১০তম তলায় “বঙ্গবন্ধু কর্ণার“ উদ্বোধন করেন। এছাড়া, সেনা কল্যাণ সংস্থা হতে সাহায্যপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান, সেনা কল্যাণ সংস্থায় কর্তব্যকালীন অবস্থায় আহত/নিহত সদস্যদের পরিবারবর্গের মাঝে উপহার সামগ্রী প্রদান ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি প্রদানসহ সেনা কল্যাণ সংস্থায় কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন। বর্ণিত অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাগণ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
০১ জুলাই ১৯৭২ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বলিষ্ঠ দিকনির্দেশনায় স্বাধীনতা পূর্ববর্তীকালের ‘ফৌজি ফাউন্ডেশন’ আপামর জনগণ ও সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কল্যাণের ব্রত নিয়ে সেনা কল্যাণ সংস্থা নামে পূণর্জন্ম লাভ করে। সেনাবাহিনী প্রধান ও চেয়ারম্যান বোর্ড অব ট্রাস্টি এর বলিষ্ঠ দিকনির্দেশনায় এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। কল্যাণমূখী এই প্রতিষ্ঠান বিগত বছরগুলোতে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রায় ২০ লক্ষ অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের মাঝে ৪৫৬ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারকে ১৫০০ কোটি টাকার অধিক কর প্রদানের মাধ্যমে জাতি গঠনে প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলেছে। এই সংস্থা ঢাকা সিএমএইচ এ ক্যান্সার ইউনিট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রায় ২০ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করেছে। এছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী বোর্ডের তত্ত্বাবধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩০টি মেডিকেল ডিসপেনসারি এবং ঢাকাস্থ ডিওএইচএস এ ৪টি জরুরী চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র অত্র সংস্থার অর্থায়নে পরিচালনা করা হচ্ছে। করোনা মোকাবেলার অংশ হিসেবে অত্র সংস্থা কর্তৃক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে ৫ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। দেশব্যাপী করোনা ও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনা কল্যাণ সংস্থা খাবার ও বিপুল পরিমান ত্রাণ সামগ্রী দেশের অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করে মানবতার কল্যাণে দুঃস্থদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
বেনিন দুর্ঘটনা এবং ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে পিলখানায় শহিদ সেনা অফিসারদের পরিবারের কল্যাণার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা মোতাবেক অত্র সংস্থা কর্তৃক মিরপুর ডিওএইচএস এ ১৪ তলা বিশিষ্ট অপারাজিতা বিল্ডিং নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। অতঃপর নির্ধারিত সময়সীমার ১৪ মাস পূর্বে প্রাক্কলিত ব্যয় হতে ৯ কোটি টাকা সাশ্রয় করে যাবতীয় নির্মাণ কাজ সমাপনান্তে গত ০৭ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রত্যেক শহিদ পরিবারের জন্য ফ্ল্যাট বরাদ্দকরতঃ ৭৮ জন শহিদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে সফলভাবে হস্তান্তরের মাধ্যমে সেনা কল্যাণ সংস্থা সেনা পরিমন্ডলে সেবার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সেনা কল্যাণ সংস্থা সিমেন্ট, নির্মিত ফ্ল্যাট, রেডিমিক্স কনক্রিট, এলপিজি, ভোজ্যতেল, আটা, ময়দা, সুজি, পানি ও বিভিন্ন ধরনের গুড়া মশলাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সর্বোচ্চ গুনগতমান বজায় রেখে খোলা বাজারে ন্যায্য মূল্যে সরবরাহের মাধ্যমে বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। সেনা কল্যাণ সংস্থার অঙ্গ সংস্থা সেনা কল্যাণ লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড শেয়ার বাজারে তালিকাভূক্তি হওয়াসহ নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সাথে সেবা প্রদানের মাধ্যমে একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সেনা কল্যাণ সংস্থা কর্তৃক কনষ্ট্রাকশন ও ডিমাইনিং কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করতঃ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে তথা কুয়েত, কাতার, সৌদিআরব, বাহরাইন, মালয়েশিয়া ও জাতিসংঘ মিশনে বিভিন্ন ব্যবসা সম্প্রসারণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
এ সকল মহতী উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী দিনে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ দেশের আপামর জনসাধারণের জন্য কর্মসংস্থান বহুগুণ বাড়িয়ে এবং আর্তমানবতার কল্যাণে আর্থিক সহায়তাপ্রদান সহ সার্বিক কল্যাণ করার মাধ্যমে সেনা কল্যাণ সংস্থা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে বলিষ্ঠ অবদান রাখবে বলে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী।