ঢাকা, ২৩ অক্টোবরঃ- বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সেফটি সেমিনার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, ঢাকায় আজ বুধবার (২৩-১০-১৯) সমাপ্ত হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে সমাপনী অধিবেশনে উপস্থিত থেকে সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন। প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে বিমান উড্ডয়ন নিরাপত্তার বিষয়ে পেশাগত মান উন্নয়নের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সামরিক কৌশলগত দিক, এর অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিধি ও সম্ভাবনার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল একটি আধুনিক, শক্তিশালী ও পেশাদার বিমান বাহিনী গঠনের। তিনি আরো বলেন তাঁর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে ১৯৭৩ সালেই সে সময়ের অত্যাধুনিক মিগ-২১ সুপারসনিক ফাইটার বিমানসহ পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, এয়ার ডিফেন্স র্যাডার ইত্যাদি সংযোজনের মাধ্যমে এদেশে একটি আধুনিক ও শক্তিশালী বিমান বাহিনীর প্রকৃত যাত্রা শুরু হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিমান ভ্রমণ আরো নিরাপদ করার লক্ষ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন। তিনি সবাইকে অবগত করেন যে, উড্ডয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য নিরাপদ উড্ডয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি বিষয়; এটি একটি উড্ডয়ন বিষয়ক সংস্কৃতি যার জন্য যথেষ্ট অনুশীলন এবং সঠিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বর্তমানে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলকারী সংস্থার বিমান পরিচালনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক বিনিয়োগের এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এ মহেন্দ্রক্ষণে আন্তর্জাতিক বিমান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ষ্টলগুলো এর স্বাক্ষর বহন করে যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আরো উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সেমিনারকে সিভিল-মিলিটারি সম্পর্ক উন্নয়নের একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত হিসাবে অভিহিত করেন। নিরাপদ উড্ডয়ন এ দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে এক অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে উল্লেখ করে তিনি এ শিল্পের বিকাশে উড্ডয়ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতঃ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দেন।
পরিশেষে দেশ এবং বিদেশের বিশেষজ্ঞ বৈমানিকসহ বেসামরিক বিমান সংস্থা এবং অন্যান্য স্থানীয় সংস্থার মিলনমেলায় যে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় হয়েছে তা উড্ডয়ন নিরাপত্তার মান উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে এসে পেীঁছালে তাঁকে স্বাগত জানান বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত।
এ সেমিনারের লক্ষ্য হচ্ছে সম্মিলিত ভাবে একই আকাশপথ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বেসামরিক ও সামরিক বিমান চলাচলের উড্ডয়ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করত পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপন করা। এবারের এই সেমিনারের মুলমন্ত্র হচ্ছে “Team effort can ensure team safety”। সেমিনারে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দলগত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা ও সুফল সম্পর্কিত ৯টি প্রবন্ধ উপস্থাপন ও আলোচনা হয়।
সেমিনারে উড্ডয়ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, স্বাগতিক বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, চীন, মালয়েশিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, মিশর, ওমান, মরক্কো, নাইজেরিয়া এবং জিম্বাবুয়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ এ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল অর্গানাইজেশন বা ICAO এর দু’জন প্রতিনিধিগণ সেমিনারে অংশ নেন। তাছাড়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, এমআইএসটি, বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশন, পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লিঃ, ফ্লাইং ক্লাব, মেঘনা এভিয়েশনসহ বিভিন্ন বেসামরিক বিমান সংস্থার প্রতিনিধিরাও এ সেমিনারে অংশগ্রহণ করে।
অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহাবুব আলী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এএমএমএম আওরঙ্গজেব চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।