ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ঃ চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে আজ রবিবার (২২-১২-২০১৯) মিডশীপম্যান ২০১৭/এ ব্যাচ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার (ডিইও) ২০১৯/বি ব্যাচের নবীন কর্মকর্তাদের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ এ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২০১৭/এ ব্যাচের ৬১ জন মিডশীপম্যান এবং ২০১৯/বি ব্যাচের ১১জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ সর্বমোট ৭২ জন নবীন কর্মকর্তা কমিশন লাভ করেন। এদের মধ্যে ৭জন মহিলা এবং ২জন মালদ্বীপের কর্মকর্তা রয়েছে।
সদ্য কমিশনপ্রাপ্তদের মধ্যে মিডশীপম্যান ২০১৭/এ ব্যাচের রাইয়ান রহমান সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জন করে সেরা চৌকস মিডশীপম্যান হিসেবে ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। এছাড়া মিডশীপম্যান মোঃ সাইদিস সাকলাইন মিরান প্রশিক্ষণে ২য় সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী হিসেবে ‘নৌ প্রধান স্বর্ণ পদক’ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০১৯/বি ব্যাচ হতে এ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট মোঃ কামরুজ্জামান শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জনকারী হিসেবে ‘বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণ পদক’ লাভ করেন।
কুচকাওয়াজ শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স¥রণ করেন। এছাড়া তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সকল বীর নৌসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের কথা স¥রণ করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের প্রয়োজনে একটি আধুনিক ও শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। সেই মহান প্রত্যয়ের আলোকেই বর্তমানে নৌবাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাস্তবমূখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যেই নৌবহরে দু’টি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে চালু করা হয়েছে উন্নত প্রশিক্ষণ সুবিধা স¤¦লিত আন্তর্জাতিক মানের সুবিশাল বঙ্গবন্ধু কমপ্লে¬ক্স। আধুনিক এ প্রশিক্ষণ সুবিধাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নবীন কর্মকর্তাদের সমুদ্রসীমার স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করার আহ¡বান জানান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
তিনি উল্লেখ করেন, নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চীন হতে ২টি মিসাইল ফ্রিগেট এবং নির্মাণাধীন ২টি করভেট অতিশীঘ্রই নৌবহরে যুক্ত হবে। একইসাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক করভেট, মাইনহান্টার, ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ভেসেল ও সেইলিং ট্রেনিং শিপসহ বিভিন্ন জাহাজ ক্রয় ও নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নেভাল এভিশেনের জন্য মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্র্যাফট, এন্টি সাবমেরিন হেলিকপ্টার ও এলআরএমপিএ (লং রেঞ্জ মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্রাফট) ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ার লক্ষ্যে মিসাইল, আইএফএফ সিস্টেম ইত্যাদিসহ বিভিন্ন প্রকার আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজনের কাজও চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ ঘাঁটি ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ এবং ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ ঘাঁটির কাজ দ্রæত এগিয়ে চলছে।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, নবীন কর্মকর্তারা নেভাল একাডেমি থেকে অর্জিত জ্ঞান যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে যোগ্য কর্মকর্তা হিসেবে গড়ে তুলবে এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে এই প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও অগ্রগতির পথে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে।তিনি পেশা হিসেবে দেশ সেবার এ পবিত্র দায়িত্বকে বেছে নেয়ায় নবীন কর্মকর্তাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। প্রধান অতিথি নবীন কর্মকর্তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অটুট রাখার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাবার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।………………………………. (প্রধানমন্ত্রী ভাষণের কপি সংযুক্ত)
রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ ২০১৯ এ অন্যান্যদের মধ্যে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানগণ, নৌ সদর দপ্তরের পিএসওগণ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়কগণসহ উধর্¡তন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নৌ কমান্ডোসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, দেশী-বিদেশী কূটনীতিক এবং শিক্ষা সমাপনী ব্যাচের অভিভাবকগণ উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।