ঢাকা, ১২ জুন ২০২১ঃ বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড এ বিআইডব্লিউটিএ-র জন্য ১০টি ১২টন বোলার্ড পুল টাগ বোটের কিল লেয়িং অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার (১২-০৬-২০২১) নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড এ আয়োজিত উক্ত কিল লেয়িং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড এর সর্বস্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নির্মাণাধীন এ সকল টাগ বোটের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২৮ মিটার, প্রস্থ ৮.৫ মিটার এবং প্রতিঘন্টায় ১১ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম। টাগ বোটসমূহ নির্মাণের লক্ষ্যে গত ২৩ মে ২০২১ তারিখে বিআইডব্লিউটিএ ও নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড এর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন টাগ বোট নির্মাণ আমাদের দেশের জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য দিন। এর ফলে একদিকে যেমন দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য টাগ বোট ডিজাইনের জন্য বিশ¡ব্যাপী ব্যাপকভাবে সমাদৃত ফার্ম রবার্ট এ্যালান লিঃ (Robert Allan Ltd) হতে নির্মিতব্য টাগ বোটের ডিজাইন সংগ্রহ করা এবং নির্মাণ কাজের মান নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির জন্য International Association of Classification Soceity (IACS) এর অন্যতম সদস্য Llyods Registers (LRS) কে নিয়োজিত করা হয়। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ-র আরো ৭টি টাগ বোট নির্মাণের চুক্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
নদীকে রক্ষার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় নদী ড্রেজিং এর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বিআইডব্লিউটিএ তাদের নিজস্ব ড্রেজার দিয়ে অবিরতভাবে নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। উল্লেখ্য ড্রেজার নন-প্রপেলার হওয়ায় একে এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় স্থানান্তরের জন্য টাগ বোটের প্রয়োজন হয়। নির্মিতব্য এই টাগ বোটসমূহ যে কোন আকারের ড্রেজার খুব সহজেই এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় নিতে সক্ষম হবে। এই টাগ বোটসমূহ আগামী দুই বছরের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ-র নিকট হস্তান্তর করা হবে বলে আশা করা যায়।
উক্ত প্রতিষ্ঠানটি নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বতীরে ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এটি ব্রিটিশ কোম্পানী দ্বারা পরিচালিত হতো। তৎকালীন পাকিস্তানের EPIDC অত্র ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর এটি BIDC এবং পরে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে চলে আসে। স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ঐতিহ্যবাহী এই শিপইয়ার্ড দেশের প্রথম সামরিক জাহাজ বিএনএস পাবনা নির্মাণ করা হয় এরপর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য আরো চারটি জাহাজ নির্মাণ করা হয়। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন কারণে প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখতে পারেনি। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিকট হস্তান্তরের পর থেকে ধীরে ধীরে এটি একটি লাভজনক শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত লাভ করছে এবং দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন সরকারি সংস্থার নিকট সফলতার সাথে বোট/জাহাজ সরবরাহ করতে সক্ষম হচ্ছে।
এ ধরণের বোট তৈরীর ক্ষেত্রে ইতিপূর্বে বাংলাদেশকে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিতে হতো। এখন থেকে দেশেই এ ধরণের উন্নতমানের বোট তৈরী সম্ভব হবে এবং এর মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। বোটসমূহ নির্মাণের মাধ্যমে নারায়াণগঞ্জ ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।