ঢাকা, ১২ জুলাই ২০২৩ ঃ পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় নৌবাহিনীর নবীন নাবিকদের প্রশিক্ষণ ও এভিয়েশন সুবিধা স¤¦লিত ঘাঁটি বানৌজা শের-ই-বাংলা এবং খুলনা শীপইয়ার্ড লিমিটেডে নির্মিত ৪টি পেট্রোল ক্রাফট ও ৪টি ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটি (এলসিইউ) এর কমিশনিং করলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার (১২-০৭-২০২৩) গণভবন হতে ভিডিও টেলিকনফারেন্স (ভিটিসি) এর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ঘাঁটির অধিনায়ক কমডোর এম মহব্বত আলী এর হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন এবং নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন। একই সাথে নৌবাহিনীর নিজস্ব তত্ত¡াবধানে খুলনা শিপইয়ার্ডে পেট্রোল ক্রাফট স্কোয়াড্রোন এর ৪টি যুদ্ধজাহাজ বানৌজা শহীদ দৌলত, শহীদ ফরিদ, শহীদ মহিবুল্লাহ ও শহীদ আখতার উদ্দিন এবং ৪টি ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটি (এলসিইউ) বানৌজা ডলফিন, তিমি, টুনা ও পেঙ্গুইন এর কমিশনিং করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ঘাঁটি ও জাহাজসমূহ নৌবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করল।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পায়রাবন্দরসহ উপকূলীয় এলাকার সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় উক্ত ঘাঁটি নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌসদস্যদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষায় বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার দেশি ও বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য নিরাপত্তায় অত্র অঞ্চলে একটি বিশেষায়িত ও স্থায়ী ঘাঁটির গুরুত্ব বিবেচনায় ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ বাস্তবায়নে এই ঘাঁটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা, ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় গত ১৯ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ঘাঁটির নামফলক উম্মোচিত হয়। আধুনিক সকল সুবিধা স¤¦লিত সুবিশাল ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ঘাঁটিতে গড়ে তোলা হয়েছে নবীন নাবিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে গড়ে তোলা হয়েছে প্রশাসনিক ভবন, এভিয়েশন সাপোর্ট ও হ্যাঙ্গার সুবিধা স¤¦লিত মাল্টিপারপাস শেড, বিভিন্ন রিপেয়ার ও মেইন্টেন্যা›স ওয়ার্কশপ। এছাড়াও ঘাঁটিতে এভিয়েশন সুবিধা এবং ডাইভিং স্যালভেজ এর কমান্ডো পরিচালনা সম্বলিত ইউনিট, নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল রয়েছে।
সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে খুলনা শীপইয়ার্ড লিমিটেডে নির্মিত ৪টি পেট্রোল ক্রাফট নৌবহরে অর্ন্তভূক্তির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকার সুরক্ষা আরো সুদৃঢ় হলো। এছাড়া নবনির্মিত এলসিইউসমূহ আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের আওতায় বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার জনগোষ্ঠিকে চট্টগ্রাম হতে ভাষাণচরে স্থানান্তর ও তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। পাশাপাশি এলসিইউসমূহ জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকবর্গকে সকল প্রকার সহায়তাসহ মায়ানমার হতে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার জনগোষ্ঠির বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। নবনির্মিত এ সকল জাহাজ ও ঘাঁটি কমিশনিং এর মাধ্যমে এ অঞ্চলে অবৈধ মৎস্য আহরণরোধ, চোরাচালান দমন, মানবপাচার রোধ, জলদস্যুতা এবং মাদকপাচার রোধসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড নিরসনকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কমিশনিং অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি আধুনিক শক্তিশালী ও সক্ষম নৌবাহিনী গঠনে বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা ও দুর্যোগ মোকাবেলায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে আধুনিক ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীর স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি তা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটি আধুনিক শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তুলতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ বিশেষায়িত ঘাঁটি সংযোজিত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের দুর্গম এলাকায় এই ঘাঁটি স্থাপনে একদিকে যেমন সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় নৌবাহিনীর অপারেশনাল কার্যক্রমের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে তেমনি দেশের সার্বভৌমত্ব ও চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তিনি নৌবাহিনীর সদস্যদের কঠোর পরিশ্রম ও কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি আরও বলেন———(ভাষণের কপি সংযুক্ত)।
এর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ঘাঁটিতে ভিডিও টেলিকনফারেন্সে সংযুক্ত হলে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহিন ইকবাল তাঁকে স্বাগত জানান। এ সময় বানৌজা শের-ই-বাংলার একটি চৌকস দল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানের অন্যান্যদের মধ্যে সংসদ সদস্যবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডোগণ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, নৌ দপ্তরের পিএসওগণ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।