ঢাকা, ১২ মার্চ ২০১৭ :- বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত নৌ-বাহিনীর বহরে সংযোজিত হলো আধুনিক দু’টি সাবমেরিন ‘নবযাত্রা’ ও ‘জয়যাত্রা’। সাবমেরিন দু’টি নৌবহরে সংযোজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো। এ উপলক্ষে আজ রবিবার (১২-০৩-২০১৭) চট্টগ্রামস্থ নৌ ঘাঁটি বানৌজা ঈসা খানে সাবমেরিন দু’টি আনুষ্ঠানিকভাবে নৌবহরে কমিশনিং করেন ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীর রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় প্রধানমন্ত্রী সাবমেরিন দু’টির অধিনায়কদের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন এবং নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন।
পরে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বানৌজা বঙ্গবন্ধু, নেভাল এভিয়েশনের দ’টি হেলিকপ্টার ও দ’টি এমপিএ এবং দক্ষ নৌ কমান্ডো দল সোয়াডস এর অংশগ্রহণে নৌবাহিনীর ত্রিমাত্রিক সক্ষমতা অর্জনের পরিচিতিমূলক একটি প্রদশর্নী প্রত্যক্ষ করেন। এরপরে প্রধানমন্ত্রী সাবমেরিনের জন্য নির্মিত বিভিন্ন বেজ সাপোর্ট ফেসিলিটিজের উদ্বোধন করেন এবং সাবমেরিনের জন্য ‘বিএনএস শেখ হাসিনা’ নামে একটি পূর্নাঙ্গ ঘাঁটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। উল্লেখ্য, ‘বিএনএস শেখ হাসিনা’ নামে উক্ত সাবমেরিন ঘাঁটিটি হবে বাংলাদেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটি।
আনুষ্ঠানিকভাবে এই সাবমেরিন দু’টি নৌবহরে অন্তর্ভূক্তির ফলে দেশের বিশাল জলসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর সার্বিক সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ব্লকসমূহে অধিকতর নিরাপত্তাসহ সার্বিকভাবে দেশের ‘ব্লু-ইকোনমি’ উন্নয়নে এই সাবমেরিন দু’টি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
চীন হতে সংগ্রহকৃত এই সাবমেরিন দু’টি কনভেনশনাল ডিজেল-ইলেক্ট্রিক সাবমেরিন যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৭৬ মিটার এবং প্রস্থ ৭.৬ মিটার। সাবমেরিন দুটি’র সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় প্রায় ১৭ নটিক্যাল মাইল এবং ডিসপ্লেসমেন্ট ১৬০৯ টন। টর্পেডো ও মাইন অস্ত্রে সজ্জিত এই সাবমেরিন দু’টি শত্রু জাহাজ ও সাবমেরিনে আক্রমণ করতে সক্ষম। এছাড়া, এ সাবমেরিনগুলো শত্রু জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণসহ বিশেষ যুদ্ধকালীন দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবে।
কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স¥রণ করেন। তিনি বলেন, আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। এই দিনটি শুধু বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী বা সশস্ত্র বাহিনীর জন্য নয় বরং সমগ্র বাংলাদেশের জন্য একটি বিশেষ দিন। স্বাধীনতার এই মাসে আমাদের সকলের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন-সাবমেরিন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সংযুক্ত হলো। এই অর্জনের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লালিত স্বপ্ন একটি আধুনিক ও শক্তিশালী নৌ-বাহিনী গড়ে তোলার পথে দেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। বিশ্বের মাত্র গুটিকয়েক দেশ সাবমেরিন পরিচালনা করে থাকে। সেই তালিকায় আজ থেকে বাংলাদেশের নাম স্থান পাবে। এটি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার একটি বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর হতেই নৌবাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাস্তবমূখী পরিকল্পনা গ্রহণ করে চলেছে। তিনি এই সাবমেরিন দুটি’র আধুনিকায়ন, ক্রুদের প্রশিক্ষণ এবং হস্তান্তর পরবর্তী কারিগরী সহযোগিতার জন্য চীন সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশ একটি শান্তি প্রিয় দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকল দেশের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য। দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে, জাতির আত্মমর্যাদার প্রশ্নে বাঙালী জাতি অবিচল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতেও আমাদের সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী আমাদের প্রয়োজন। নৌ-বাহিনীতে সংযোজিত হওয়া এই সাবমেরিন দু’টি দেশের সংকটময় মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে এবং দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এই সাবমেরিন দু’টি অভূতপূর্ব সক্ষমতা যোগ করবে। এর মাধ্যমে তিনি নৌ-বাহিনীকে একটি সত্যিকারের ত্রিমাত্রিক নৌ-বাহিনীতে রূপান্তর করার বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শক্তিশালী সারফেস ফ্লিটের পাশাপাশি নেভাল এভিয়েশন এবং সাবমেরিন আর্ম যুক্ত হয়ে আজ বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং আধুনিক ত্রিমাত্রিক নৌ-বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ———————(ভাষণের কপি সংযুক্ত)——————————————————————————————————————————————।
এর আগে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম নৌ-ঘাঁটিতে এসে পৌঁছালে নৌ-বাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল এম আবু আশরাফ তাঁকে স্বাগত জানান। এছাড়া, অনুষ্ঠানে মন্ত্রীপরিষদের সদস্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং বিদেশী কুটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।