ঢাকা, ১০ জানুয়ারি ২০২২: বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য নির্মিত ০১টি ইনশোর প্যাট্রোল ভেসেল (আইপিভি) এবং ৬টি ওয়াটার জেট প্রযুক্তির হাই স্পিড বোটের হস্তান্তর অনুষ্ঠান আজ সোমবার (১০-০১-২০২২) ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লি: নারায়ণগঞ্জ-এ সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনীর মাননীয় মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী, এনডিইউ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, বিএন, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ডিইডব্লিউ লিঃ এর কনস্ট্রাকসন সাইটে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন। উক্ত অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধান অতিথি আইপিভি এবং বোটসমূহের হস্তান্তর কার্য সুসম্পন্ন করেন। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন এরূপ যুদ্ধজাহাজ এবং হাই স্পিড বোট নির্মাণ আমাদের দেশের জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এর ফলে একদিকে যেমন দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে।
প্রায় ৫৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে ২৩ নট গতি সম্পন্ন আইপিভি এবং ১৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে ২৭ নট গতিসম্পন্ন আধুনিক ওয়াটার জেট প্রযুক্তির হাই স্পিড বোটগুলি বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের বহরে যুক্ত হয়ে Coastal patrol and policing duties, Protection of territorial waters, Anti-piracy, Anti-smuggling, Anti-drag trafficking operation and surveillance, Search and Rescue operation, Fishery protection and patrol in inland and coastal areas ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত থাকবে। নির্মিত আইপিভি এবং হাই স্পিড বোটগুলি জাহাজ নির্মাণের আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির প্রতিষ্ঠান International Association of Classification Soceity (IACS)এর অন্যতম সদস্য China Classification Society (CCS)এবং Bureau Veritas (BV) কর্তৃক অনুমোদিত। তাছাড়া বোটগুলি যে কোন দুর্যোগময় মুহুর্তে অতি অল্প সময়ে ত্রাণসহ নানাবিধ সহায়তা প্রদান করতে সক্ষম। বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার কর্তৃক জারিকৃত কঠোর লকডাউনের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত ছিল।
উল্লেখ্য, ইয়ার্ডটি ঐতিহ্যবাহী নগরী নারায়ণগঞ্জের কোল ঘেঁষে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাড়ে ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মোট ২২ একর এলাকা সমৃদ্ধ এই ইয়ার্ড দেশের সবচাইতে ঐতিহ্যবাহী ও পুরাতন ডকইয়ার্ড, যার জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের ক্ষেত্রে রয়েছে প্রায় শত বর্ষের প্রত্যক্ষ ও বাস্তব অভিজ্ঞতা। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর এটি ইওউঈ এবং পরে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে চলে আসে। স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ঐতিহ্যবাহী এই ইয়ার্ডে নির্মাণ করা হয় দেশের প্রথম সামরিক জাহাজ বিএনএস পাবনা। তারপর একে একে বাংলাদেশ নেবৈাহিনীর জন্য আরো চারটি জাহাজ নির্মিত হয় যেগুলো পাবনা ক্লাস নামে পরিচিত। এই ডকইয়ার্ড প্যাট্রোল ক্রাফট/যুদ্ধজাহাজ তৈরীতে যে পারদর্শীতা অর্জন করেছে তা জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি দেশকে এই ধরনের আরও যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া শিপবিল্ডিং ও জাহাজ মেরামত কাজের পাশাপাশি সকল প্রকার স্টিল ইঞ্জিনিয়ারিং কাজসহ বিভিন্ন জাহাজের ইঞ্জিন ওভারহলিং থেকে শুরু করে প্রায় সকল ধরণের ভারী মেকানিক্যাল কাজ এই ডকইয়ার্ডের সক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত। নির্ভরযোগ্য ও যুগোপযোগী অবকাঠামো, গুণগতমান নিয়ন্ত্রণ, শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবাসহ সকল সুযোগ সুবিধা, সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং পরিবেশ বান্ধব উৎপাদনমুখী কর্মপরিবেশ অত্র ইয়ার্ডের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের চালিকাশক্তি।