ঢাকা, ০৪ ডিসেম্বর ঃ- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রবিবার (০৪-১২-১৬) বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুকে মর্যাদাপূর্ণ ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করেন।
এর আগে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু’র এয়ার অধিনায়ক এয়ার কমডোর মোঃ মফিদুর রহমান তাঁকে স্বাগত জানান।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের একটি প্রধান অপারেশনাল বিমান ঘাঁটি – যা Home of Fighters নামে পরিচিত। জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আকাশ প্রতিরক্ষায় এ ঘাঁটি বিশেষ ভূমিকা রাখে। শান্তিকালীন সময়ে অত্র ঘাঁটি হতে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন দূর্যোগ মোকাবেলায় বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হয় এবং এক্ষেত্রে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুর পারদর্শিতা বিভিন্ন সময়ে প্রমাণিত ও প্রশংসিত হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় গত ০৯ এপ্রিল, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এই ঘাঁটিটি তার পূর্ণাঙ্গ জনবল এবং যন্ত্রাংশসহ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতির পিতা ‘বঙ্গবন্ধুর’ নামানুসারে “বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু” হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে এ ঘাঁটিটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সর্ববৃহৎ যুদ্ধ বিমান ঘাঁটি এবং এক অপরিহার্য ঘাঁটি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত।
ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদানকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দেন গ্র“প ক্যাপ্টেন রেজা এমদাদ খান। এ সময় প্যারেড কর্তৃক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম ও তিনবার জয়ধ্বনি প্রদান করা হয়। অতঃপর ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড-কে সম্মান প্রদর্শনের জন্য জাতীয় পতাকাসহ একটি হেলিকপ্টার এর পাস অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও অত্র ঘাঁটি হতে পরিচালিত মিগ-২৯, এফ-৭ বিজি ও এফ-৭ বিজি ১ বিমানের মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট পরিচালনা করা হয়। পরে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড সমুন্নত রাখার জন্য মোনাজাত করা হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিমান বাহিনীর সকল স্তরের সদস্যদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, ‘আমি শ্রদ্ধাভরে স¥রণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে- যাঁর নির্দেশে পরিচালিত দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় আমাদের প্রিয় স¦াধীনতা। আজকের এ দিনে আমি আরো স¥রণ করছি, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বিমান বাহিনীর সকল শহীদকে যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি বিশ্বের বুকে নতুন এক মানচিত্র- আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। জাতি এই মহান শহীদদের অসামান্য অবদান চিরদিন কৃতজ্ঞচিত্তে স¥রণ করবে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, বিগত পাঁচ বছরে এই ঘাঁটি সফল উড্ডয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য মোট ১৫৯ জন অপারেশনাল ফাইটার পাইলট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, যা আগামীতে বাংলার আকাশসীমা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করবে। ঘাঁটিস্থ অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট বিমান বাহিনীর বিমান, যানবাহন ও ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ মেরামত ও ওভারহলিং-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আর এ সকল অর্জন ও কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরপ আজ বঙ্গবন্ধু ঘাঁটি ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্জন করল। এই ঘাঁটিতে অবস্থিত ফাইটার স্কোয়াড্রনগুলির অপারেশনাল স্ট্যান্ডার্ড অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের। আকাশযুদ্ধে সুসজ্জিত এই বঙ্গবন্ধু ঘাঁটি বাংলাদেশের আকাশসীমাকে শত্র“মুক্ত ও নিরাপদ রাখতে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধু ঘাঁটির সকল অগ্রগতিকে তরান্বিত করতে আমাদের সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন’। এই মাহেন্দ্রক্ষণে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামাঙ্কিত বঙ্গবন্ধু ঘাঁটির ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্জনের এই মর্যাদা ও গৌরব বিমান বাহিনীর সদস্যরা সমুন্নত রাখবেন বলে তিনি নির্দেশ প্রদান করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিমান বাহিনীর সদস্যদের দেশপ্রেমের মহানব্রতকে ধারণ করে পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলার সমন্বয়ে বিমান বাহিনীর মর্যাদা আরও উচুঁতে নিতে সদা তৎপর থাকার আহবান জানান।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরে পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। সবশেষে তিনি বিমান বাহিনী প্রধান ও নির্বাচিত বিএএফ কর্মকর্তাদের সাথে আলোকচিত্রে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টামন্ডলী, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বৈদেশিক কুটনৈতিকবৃন্দ, ভারপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী প্রধান ও নৌ বাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারসহ সামরিক, আধা-সামরিক ও অসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।