চট্টগ্রাম, ২১ মার্চ ২০১৮ ঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার (২১-০৩-২০১৮) চট্টগ্রামস্থ বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের শুভ উদ্বোধন করেন। পরে, তিনি নৌবাহিনীর বিভিন্ন যুদ্ধজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের কেন্দ্রবিন্দু বিএন ডকইয়ার্ডকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করেন। বিশাল সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ সমুদ্রে নৌবহরের সকল অপারেশনাল কর্মকান্ডকে নিরবিচ্ছিন্ন রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ বিএন ডকইয়ার্ডকে এই ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করা হয়।
নেভাল একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স এর এই উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী একাডেমি প্রতিষ্ঠার কাক্সিক্ষত স্বপ্নের পূর্ণতা লাভ করে। বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর একাডেমিতে এর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। আধুনিক এই কমপ্লেক্সটি মোট ১৬টি পৃথক ভবন ও অবকাঠামোর সমন্বয়ে নির্মিত। এতে রয়েছে একাডেমিক ভবন, ট্রেনিং উইং, ওয়ার্ডরুম, প্যারেড গ্রাউন্ড, সুইমিং পুল, বোট পুল ও বাসস্থানসহ অন্যান্য সুবিধাদি। আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে এতে সংযুক্ত করা হয়েছে সীম্যানশীপ, এন্টি সাবমেরিন, গানারী ও কমিউনিকেশন মডেল রুম, চার্ট রুম, সুপরিসর লাইব্রেরী, কম্পিউটার ও ল্যাংগুয়েজ ল্যাব এবং আধুনিক অডিটোরিয়াম। এছাড়া, বিজ্ঞান ও কারিগরি প্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছে সাতটি বিভিন্ন ধরণের বিজ্ঞানাগার।
বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের মূল একাডেমিক ভবনটি জাহাজের সম্মুখভাগের আদলে নির্মিত হওয়ায় বঙ্গোপসাগর হতে এটি ভাসমান জাহাজের মতো দৃশ্যমান হয়। এর সাথে জাতির পিতার স¥ৃতিকে চির অম্লান করে ধরে রাখতে কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে তৈরী করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ প্রতিকৃতি ভাস্কর্য। ১৮ ফুট উচ্চতার এ ভাস্কর্যটি সমতল থেকে ২৩ ফুট উচ্চতায় স্থাপিত। ব্রোঞ্জের তৈরী এ ভাস্কর্যটির ওজন প্রায় ১৮ টন। যা এযাবৎকালে বাংলাদেশে নির্মিত জাতির পিতার সর্ববৃহৎ আবক্ষ প্রতিকৃতি।
নেভাল একাডেমি কমপ্লেক্স এর উদ্বোধন শেষে দুপুরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বানৌজা ঈসাখানে বিএন ডকইয়ার্ডকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করেন। ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজসহ সামরিক সরঞ্জামাদি ও সাবমেরিনের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত এবং আধুনিকায়নের জন্য বিএন ডকইয়ার্ড সর্বোচ্চ দেশপ্রেম ও পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শন করে চলেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭২ সালে একটি মাত্র শেডে অল্পসংখ্যক সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিএন ডকইয়ার্ড বর্তমানে ২৪টি ওয়ার্কশপ এবং প্রায় দুই হাজার সামরিক ও বেসামরিক জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। বিএন ডকইয়ার্ড আইএসওঃ ৯০০০-এর গুনগতমান বজায় রেখে প্রতিবছর সাবমেরিনসহ অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম, যুদ্ধজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় ৩৬,০০০টি কার্যাদেশ বাস্তবায়নে সক্ষম, যা প্রায় ৯ লক্ষ শ্রম-ঘন্টার সমপরিমাণ। ইতোমধ্যে বিএন ডকইয়ার্ডের নিজস্ব ফ্লোটিং ডক ‘বিএনএফডি সুন্দরবন’ যাত্রা শুরুর পর হতে দেশি-বিদেশী ৭০৭টি যুদ্ধজাহাজের সফল ডকিং ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পন্ন করেছে। এছাড়া, ‘বিএন স্লিপওয়ে’ প্রায় ৩৬২টি জাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পন্ন করেছে। পাশাপাশি বিএন ডকইয়ার্ডে নৌবহরের সকল জাহাজ ও সাবমেরিনের জন্য বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি, টেলিফোনসহ অন্যান্য সেবা প্রদানের সুব্যবস্থা রয়েছে।
ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স¥রণ করেন এবং একটি আধুনিক নৌবাহিনী গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর। আর সে কারণেই স্বাধীনতার পরে শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উন্নয়নের জন্য বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন এবং নৌবাহিনীর ঘাঁটিসমূহকে একযোগে কমিশন করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি নৌবাহিনীর বৃহত্তম প্রশিক্ষণ ঘাঁটি বানৌজা ঈসাখান কমিশন করেন এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ‘নেভাল এনসাইন’ প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় নৌবহরে আধুনিক দুটি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ ত্রিমাত্রিক শক্তি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া নৌবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে সর্বোচ্চ সংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, গড়ে তোলা হয়েছে হেলিকপ্টার ও টহল বিমান সমৃদ্ধ নেভাল এভিয়েশন এবং বিশেষায়িত ফোর্স সোয়াড্স।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে নৌবাহিনীর বিভিন্ন উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত এবং আধুনিকায়নে দেশপ্রেম ও পেশাগত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য বিএন ডকইয়ার্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
(…………………….মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের কপিসংযুক্ত…………………………….)
এর আগে, সকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামস্থ বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে এসে পৌঁছালে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, এনবিপি, ওএসপি, বিসিজিএম, এনডিসি, পিএসসি তাঁকে স্বাগত জানান।
বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স এর উদ্বোধন ও বিএন ডকইয়ার্ডের ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, উপদেষ্টাগণ ও স্থানীয় সংসদ সদস্যগণ, সেনা ও বিমান বাহিনী প্রধান, নৌ সদর দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের সকল নৌ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, মুক্তিযুদ্ধের নৌ কমান্ডোসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, দেশী-বিদেশী কূটনীতিকবৃন্দ ও উর্ধ¦তন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।