বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। উপস্থিত প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ার সম্মানিত সদস্যবৃন্দ আসসালামু আলাইকুম।
১। আপনারা সকলে অবগত আছেন, গত ০১ জুলাই ২০১৬ তারিখ রাত প্রায় পৌনে নয়টায় রাজধানীর গুলশান-২ এর রোড নং ৭৯স্থ হলি আর্টিজান বেকারী নামক একটি রেষ্টুরেন্টে দুষ্কৃতিকারীরা গুলি ছুঁড়তে ছূঁড়তে প্রবেশ করে এবং রেষ্টুরেন্টের সকলকে জিম্মি করে। ঘটনা ঘটার সাথে সাথে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে পুলিশ কর্ডন করে সন্ত্রাসীদের যথেচ্ছ কর্মকান্ড থেকে নিবৃত্ত করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব যে সাহসিকতা, আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করেছে তা অনন্য। তাদের এই অভিযানকালে ২ জন সাহসী পুলিশ অফিসার শাহাদাৎ বরণ করেন এবং ২০ জনের অধিক পুলিশ সদস্য আহত হন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে অভিযান পরিচালনার জন্য মাননীয় সরকার প্রধান কর্তৃক আদেশ প্রদান করা হয়। সে মোতাবেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’ পরিকল্পনা করে। সেনাবাহিনী গতকাল রাত থেকে ঘটনাস্থলে অবস্থানরত আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব সহযোগে সম্মিলিতভাবে ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’ পরিচালনা করা হয়।
২। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানের মাধ্যমে ০৭৪০ ঘটিকায় অপারেশন শুরু করে ১২-১৩ মিনিটের মধ্যে সকল সন্ত্রাসীকে নির্মূল করে টার্গেট এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে, অপারেশনের অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে সকাল ০৮৩০ ঘটিকায় অভিযানের সফল সমাপ্তি ঘটে। অভিযানের মাধ্যমে আমরা ৩ জন বিদেশী (১ জন জাপানী ও ২ জন শ্রীলংকান) নাগরিকসহ মোট ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সমর্থ হই। অভিযানে, ৭ জন সন্ত্রাসীর মধ্যে ৬ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়। এবং ১ জন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়াও, অভিযান শেষে তল্লাশীকালে ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, যাদের সবাইকে গত রাতেই হত্যা করা হয় এবং অধিকাংশকেই ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। মৃতদেহগুলোকে প্রচলিত নিয়ম মেনে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে। তাদের পরিচয় নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে কোন জিজ্ঞাস্য থাকলে পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রভোষ্ট মার্শাল এর সাথে ০১৭৬৯০১২৫২৪ নাম্বারে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হলো। প্রাথমিকভাবে সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যবহৃত পিস্তল, ফোন্ডেড বাট একে ২২, অবিস্ফোরিত আইইডি, ওয়াকিটকি সেট ও অনেক ধারালো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এখানে উল্লেখ্য, চুড়ান্ত অভিযানে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের কেহই হতাহত হয়নি।
৩। আপনারা অবগত আছেন, গতকাল রাতের অপারেশনে অংশ নিয়ে ২ জন পুলিশ সদস্য শাহাদাৎ বরণ করেন। তারা সাহসিকতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলায় অংশ নেন। আমরা অকুতোভয় এই দুই সদস্যের রুহের মাগফেরাত কামনা করি। এছাড়া, এই অপারেশনে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস এর সদস্যবৃন্দ নিরলসভাবে সাহসিকতার সাথে অংশ নেন। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সার্বিক কৌশলের ব্যবহারের মাধ্যমে অতি দ্রুততার সাথে এই অভিযান সফল করার জন্য সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই। মাননীয় সরকার প্রধানের সময়োচিত, দৃঢ়, সাহসী সিদ্ধান্ত ও সঠিক দিক নির্দেশনার জন্যই এই অভিযান সফল হয়। তদন্ত সাপেক্ষে এই ঘটনার অন্যান্য বিস্তারিত তথ্যাবলী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরবর্তীতে জানানো হবে। পরিশেষে, চুড়ান্ত অভিযানে চলাকালীন সময়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়ায় এই অভিযানে অংশগ্রহণকারী সকল বাহিনীর পক্ষ থেকে সকল প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে আমি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।