চট্টগ্রাম, ২১ জুন ২০১৮ ঃ সমুদ্রে নিরাপদ জাহাজ চলাচল, ব্লু-ইকোনমির উন্নয়ন, সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহার এবং সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় হাইড্রোগ্রাফির গুরুত্ব তুলে ধরতে বিশ¡ব্যাপী “হাইড্রোগ্রাফি দিবস-২০১৮’ পালিত হচ্ছে।
এ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (২১-০৬-২০১৮) বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলে ‘স্কুল অব মেরিটাইম ওয়ারফেয়ার এন্ড ট্যাকটিস (এসএমডব্লিুউটি)’ অডিটরিয়ামে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে সমুদ্রপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, সমুদ্রপথে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো “Bathymetry-the foundation for sustainable seas, oceans and waterways.”। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী নৌবাহিনী প্রধান (অপারেশন্স) রিয়ার এডমিরাল এম মকবুল হোসেন, ওএসপি, বিসিজিএমএস, এনডিইউ, পিএসসি।
জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক ২০৩০ কর্মসূচীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘‘টেকসই উন্নয়নের জন্য মহাসাগর, সাগর ও সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং তার পরিবেশবান্ধব ব্যবহার’’। সমুদ্রের তলদেশের গভীরতা এবং প্রকৃতির উপর সম্যক জ্ঞান লাভ ছাড়া জাতিসংঘ ঘোষিত এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয় বিধায় বিশ¡ব্যাপী হাইড্রোগ্রাফির গুরুত্ব ক্রমশই বাড়ছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ইতোমধ্যে সমুদ্রে নিরাপদ নেভিগেশনের জন্য আন্তর্জাতিক মানের নটিক্যাল চার্ট তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে। এছাড়া, নৌবাহিনীর তৈরীকৃত চার্টসমূহ বিশ¡ব্যাপী মেরিনারগণ তাদের বাণিজ্যিক জাহাজসমূহের সমুদ্রে নেভিগেশনের জন্য ব্যবহার করছে। এসকল চার্ট মুদ্রণ ও বিশ¡বাজারে বিক্রির মাধ্যমে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনী ইলেকট্রনিক নেভিগেশনাল চার্ট তৈরির সামর্র্থ্য অর্জন করেছে যা বিশ¡ব্যাপী মেরিনারদের জন্য সহজলভ্য করার প্রক্রিয়া চলছে। এর ফলে বাংলাদেশ নৌবাহিনী দেশের সামুদ্রিক বাণিজ্য প্রসারে এবং নিরাপদ নেভিগেশনে আরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।
উল্লেখ্য, বিশ¡ অর্থনীতির উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী বাজারজাত করণের জন্য সাগর-মহাসাগর অন্যতম প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। বিশ¡ বাণিজ্যের শতকরা নব্বই ভাগের বেশী মালামাল সমুদ্রের মাধ্যমে পরিবহণ করা হয়ে থাকে। ফলে জাহাজের নিরাপদ চলাচলের জন্য সমুদ্রের তলদেশ সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভিসেস সমুদ্রে নিরাপদ চলাচলের লক্ষ্যে নটিক্যাল চার্ট ও পাবলিকেশন্স এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ সরবরাহ করে থাকে। এছাড়া সমুদ্র তলদেশের আকৃতি-প্রকৃতি ও বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, ড্রেজিং, অফশোর কন্সট্রাকশন, ক্যাবলস ও পাইপলাইন স্থাপন, টেলিকমিউনিকেশন্স, আবহাওয়া ও জলবায়ু বিজ্ঞান, সামুদ্রিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, এ্যাকুয়াকালচার, ফিশিং, বায়োমেডিসিন, সমুদ্র পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রমে হাইড্রোগ্রাফিক বিভিন্ন গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যা একদিকে অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে তেমনি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। ফলে সমুদ্রের উত্তরোত্তর ব্যবহার বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় হাইড্রোগ্রাফিক কর্মকান্ডের গুরুত্ব ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পাবে।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল, রিয়ার এডমিরাল এম আবু আশরাফ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও মেরিটাইম সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিগণ, ন্যাশনাল হাইড্রোগ্রাফিক কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।