খুলনা, ০৮ নভেম্বর ২০১৭ঃ খুলনা শীপইয়ার্ডে দু’টি লার্জ পেট্রোল ক্রাফ্ট (এলপিসি) তৈরীর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বড় আকারের যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে সক্ষমতা অর্জন করলো বাংলাদেশ। আজ বুধবার (৮-১১-২০১৭) খুলনাস্থ নৌ ঘাঁটি বানৌজা তিতুমীর এর নেভাল বার্থে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধজাহাজ দুর্গম ও নিশান এবং সাবমেরিন টাগ পশুর ও হালদা নৌবহরে কমিশনিং করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন বিধ¡ংসী যুদ্ধ ক্ষমতায় একটি নতুন মাত্রা সংযোজিত হলো। অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি জাহাজসমুহের অধিনায়কদের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন এবং নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন।
এর আগে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি খুলনাস্থ নৌঘাঁটি বানৌজা তিতুমীরে এসে পৌঁছালে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ, ওএসপি, বিসিজিএম, এনডিসি, পিএসসি এবং কমডোর কমান্ডিং খুলনা কমডোর সামসুল আলম, (জি), এনইউপি,এনডিইউ, পিএসসি, বিএন তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।
কমিশনিং অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নৌ সদস্যদের আত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স¥রণ করেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ———————(ভাষণের কপি সংযুক্ত)———————————————————————————————————————————————————————————————–।
সদ্য সংযোজিত হওয়া সাবমেরিন বিধ¡ংসী এ জাহাজ দুটির দৈর্ঘ্য ৬৪.২ মিটার এবং প্রস্থ ০৯ মিটার যা ২৫ নট বা ঘন্টায় ৪৬ কিঃমিঃ গতিতে চলতে সক্ষম। এতে রয়েছে দু’টি করে টর্পেডো লাঞ্চার, যা মোট ছয়টি টর্পেডো ধারণে সক্ষম। এছাড়া, রয়েছে শক্তিশালী সোনার যার মাধ্যমে নির্ধারিত দূরত্বের মধ্যে বহিঃশত্রুর সাবমেরিন খুঁজে বের করে টর্পেডো দ্বারা ধ¡ংস করা সম্ভব। তাছাড়া, জাহাজ দুটিতে রয়েছে ৭৬ মিঃ মিঃ এবং ৩০ মিঃমিঃ কামান যা শত্রুদের বিমান ও যুদ্ধ জাহাজ মোকাবেলার পাশাপাশি সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় স্থলযুদ্ধে গোলাবর্ষণ করতে সক্ষম। অন্যান্য যুদ্ধজাহাজ ও বিমানের সাথে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে অপারেশন পরিচালনার জন্য এ জাহাজ দু’টিতে রয়েছে আধুনিক নেভিগেশন সিস্টেম এবং কমব্যাট ইনফরমেশন সেন্টার। এছাড়া, অন্যান্য আধুনিক সমরাস্ত্রের পাশাপাশি প্রতিটি জাহাজে রয়েছে একটি করে উচ্চ গতি সম্পন্ন বোট যার মাধ্যমে সমুদ্রে উদ্ধার তৎপরতা, সন্ত্রাস ও জলদস্যু দমন এবং চোরাচালান বিরোধী নানাবিধ অপারেশন পরিচালনা করা সম্ভব।
এই জাহাজ দ’ুটি যুদ্ধকালীন সময়ে দেশের জলসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সাবমেরিন বিধ¡ংসী অভিযান, বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া, শান্তিকালীন সময়ে জাহাজ দ’ুটি অবৈধ মৎস্য নিধন, জলদস্যুতা, মানবপাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধসহ বর্তমান সরকারের ব¬ু-ইকোনমি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। উল্লেখ্য, গত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা শিপইয়ার্ডে বানৌজা দুর্গম এবং বানৌজা নিশান তৈরীর শুভ সূচনা করেন।
নবনির্মিত টাগ দু’টির দৈর্ঘ্য ৩২ মিটার এবং প্রস্থ ১১.৬ মিটার। টাগ দু’টি বহিঃনোঙ্গরে ও পোতাশ্রয়ে সাবমেরিনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি নৌবাহিনীর অন্যান্য জাহাজ এবং বাণিজ্যিক জাহাজকে টোয়িং সহযোগিতা প্রদান, পোতাশ্রয়ে ও সমুদ্রে অগ্নিনির্বাপণ এবং উদ্ধারকারী জাহাজ হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রী পরিষদের মাননীয় সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদের মাননীয় সদস্য, মাননীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ, কূটনৈতিক মিশনের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক (General Abu Belal Muhammad Shafiul Huq) সহ সরকারের উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।