ঢাকা, ০৩ জানুয়ারি ২০২৩: শীতকালীন প্রশিক্ষণ এলাকা সাভার মিলিটারি ফার্মে ফিল্ড হেডকোয়ার্টার আজ মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারি ২০২৩) পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, এসবিপি (বার), ওএসপি, এনডিইউ, পিএসসি, পিএইচডি। এ সময় তিনি বলেন শীতকালীন প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে সারাদেশে স্ব-স্ব দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন হয়েছে সেনাসদরসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল ফরমেশনসমূহ। গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ হতে তিন সপ্তাহের জন্য নতুন উদ্যমে এই প্রশিক্ষণ শুরু হয়। জাতির গর্ব এবং আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শীতকালীন প্রশিক্ষণের প্রতিপাদ্য হলো “যুদ্ধ পারঙ্গমাতা, যুদ্ধোপযোগিতা ও রণপ্রস্তুতি প্রদর্শন’।
দেশ সেবায় নিজেদের প্রস্তুত করে তুলতে সরেজমিনে বাস্তবধর্মী বিভিন্ন সামরিক বিষয়াদি অনুশীলনের মাধ্যমে পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতার উন্নয়ন সাধন করাই এই অনুশীলনের মূল লক্ষ্য। এ সময় সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, এসবিপি, এসজিপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, পিএইচডি; কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ সাইফুল আলম, এসবিপি, ওএসপি, এসইউপি, এডব্লিউসি, পিএসসি, পিএইচডি এবং জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহম্মদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, এসবিপি, বিএসপি, এনডিসি, পিএসসি, এমফিল; ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল মুহাম্মদ যুবায়ের সালেহীন, এসইউপি, এনডিইউ, পিএসসি; সামরিক সচিব মেজর জেনারেল খান ফিরোজ আহমেদ, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি; চিফ কনসালটেন্ট জেনারেল, এডহক কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট মেজর জেনারেল এ কে এম রেজাউল মজিদ, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি’সহ সেনাসদরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ডিফেন্স জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনসহ অন্যান্য গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ডাকে সাড়া দিয়ে লাখো মানুষের সর্বোচ্চ আত্নত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম “জন যুদ্ধের’এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আমাদের রয়েছে যুদ্ধ জয়ের এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, যার মূলমন্ত্রকে বুকে ধারণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ জাতির গর্ব ও আস্থার প্রতীক। প্রতিবছরের ন্যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ হতে শীতকালীন প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন হয়েছে এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে সেনাবাহিনী পর্যায়ে শীতকালীন প্রশিক্ষণের পর গত বছর সেনাবাহিনী প্রধানের নির্দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রথমবারের মত লজিস্টিকস এফটিএক্স এবং দশ বছর পর এ বছর এত বৃহৎ পরিসরে প্রশিক্ষণ পরিচালিত হচ্ছে যা সেনাবাহিনীর সক্ষমতা এবং নির্ভরযোগ্য রণপ্রস্তুতির বাস্তব বহিঃ প্রকাশ।
জাতির গর্ব এবং আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এবারের শীতকালীন প্রশিক্ষণের প্রতিপাদ্য হলো “যুদ্ধ পারঙ্গমতা, যুদ্ধোপযোগিতা ও রণপ্রস্তুতি’। দেশকে বহিঃ শত্রুর আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে তুলতে বাস্তবধর্মী বিভিন্ন সামরিক বিষয়াদি অনুশীলনের মাধ্যমে পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতার উন্নয়ন সাধন করাই এই অনুশীলনের মূল লক্ষ্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং সেনাবাহিনী প্রধানের বলিষ্ঠ দিক নির্দেশনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি আধুনিক এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ধরণের উন্নত যুদ্ধাস্ত্র এবং সরঞ্জামাদি সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন, নতুন কৌশলের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আধা সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য এই অনুশীলনের পরিকল্পনা করা হয়।
এ বছর শীতকালীন বহিরঙ্গণ অনুশীলনটিতে অধিকতর বাস্তবধর্মী ও অভিনব জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। আজ প্রশিক্ষণের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি যে, আমাদের এই শীতকালীন প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য অর্জিত হয়েছে। আমরা এখন বিগত বছরের চেয়ে অধিক প্রশিক্ষিত, অধিক প্রত্যয়ী এবং বহিঃ শত্রুর যে কোন আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শন “জনগণের সেনাবাহিনী’। এই দর্শনকে সমুন্নত রেখে সেনাবাহিনী প্রধানের প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও শীতকালীন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর অঞ্চলসমূহ নিজস্ব দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং শীতার্ত মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান ও ঔষধ বিতরণসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় গবাদিপশুর বিনামূল্যে চিকিৎসা, পরামর্শ প্রদান ও ঔষধ বিতরণ করা হচ্ছে।
এবারের অনুশীলনে সেনাবাহিনী প্রধান, সেনাসদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারগণ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, জিওসি আর্মি ট্রেনিং এ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ বিভিন্ন ফরমেশনে অনুশীলন কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন এবং তাৎক্ষণিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। কঠোর প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যের পেশাগত উৎকর্ষতা সাধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সার্বিকভাবে একটি বিশ্বমানের বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠেছে বলে সেনাবাহিনী প্রধান দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
সেনাবাহিনী প্রধান ফিল্ড হেডকোয়ার্টার পরিদর্শনের পূর্বে ৬ স্বতন্ত্র এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেড এবং ৮৬ স্বতন্ত্র সিগন্যাল ব্রিগেডের শীতকালীন প্রশিক্ষণ এলাকা আশুলিয়ার দত্তপাড়া পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালীন সময় তিনি ৯০০ জন অসহায় ও দুস্থ পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। এছাড়া বিনামূল্যে স্থানীয় ৪৬৩ জন কে মেডিকেল চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরন করা হয়। শীতকালীন প্রশিক্ষণ শেষে আগামী ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ সেনানিবাসে প্রত্যাবর্তন করবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।