ঢাকা, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রবিবার (০৩-০৯-২০২৩) নৌবাহিনী সদর দপ্তরে ‘নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী নির্বাচনী পর্ষদ-২০২৩’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। নৌবাহিনী সদর দপ্তরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন হতে কমডোর, কমান্ডার হতে ক্যাপ্টেন ও লেঃ কমান্ডার হতে কমান্ডার এবং বিমান বাহিনীর গ্রæপ ক্যাপ্টেন হতে এয়ার কমডোর, উইং কমান্ডার হতে গ্রæপ ক্যাপ্টেন এবং স্কোয়াড্রন লীডার হতে উইং কমান্ডার পদবিতে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত এ পর্ষদ, সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ভবিষ্যৎ জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা নির্বাচন করবেন।
নির্বাচনী পর্ষদ-২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, পেশাগত দক্ষতা, নেতৃত্বের গুণাবলী, শৃঙ্খলার মান, সততা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের উপর গুরুত্ব আরোপের নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর প্রিয় মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একটি অত্যাধুনিক, প্রশিক্ষিত ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বর্তমান সরকার প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। তিনি আরও বলেন, নৌবাহিনীকে একটি অত্যাধুনিক, যুগোপযোগী ও ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন, হেলিকপ্টার, মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট এবং বিশেষায়িত ফোর্স সোয়াডস অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। নৌবহরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে চলমান রয়েছে আধুনিক সার্ভেইলে›স ইকুইপমেন্ট সংযোজন ও কমব্যাট সিস্টেমসমূহের আধুনিকায়নের কার্যক্রম। সাবমেরিনের অপারেশনাল কর্মকান্ড, রক্ষনাবেক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ সাবমেরিন ফ্লিট এর স¤প্রসারণের লক্ষ্যে কক্সবাজারের পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটি এবং দক্ষিণাঞ্চলে জনকল্যাণ ও জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় স্থাপন করা হয়েছে বানৌজা শের-ই-বাংলা। পাশাপাশি কমিশনিং করা হয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত ৪১ পিসিএস এর ৪টি জাহাজ এবং ৪টি এলসিইউ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বিমান বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে সংযোজন করা হয়েছে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, বিভিন্ন ধরনের র্যাডার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র। বিগত এক বছরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে মনুষ্যবিহীন আকাশযান (Unmanned Aerial Vehicle) এবং মোবাইল গ্যাপ ফিলার র্যাডার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈমানিকদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য সংযোজন করা হয়েছে অত্যাধুনিক বেসিক ট্রেইনার, জেট ট্রেইনার এবং বিভিন্ন ধরনের সিমুলেটর। বিমান বাহিনীতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নতুন নতুন ঘাঁটি, ইউনিট এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। এসকল ঘাঁটি ও স্থাপনার নিরাপত্তা সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে এয়ার রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং বিমান বাহিনীর অবকাঠামোগত উন্নয়নও অব্যাহত রয়েছে। এই পর্ষদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ ভবিষ্যতে তাদের সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীকে দেশমাতৃকার সেবায় আরও ভালভাবে সম্পৃক্ত করবেন বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, (মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের কপি সংযুক্ত …………..)।
এর আগে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান নির্বাচনী পর্ষদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় উপস্থিতির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং বক্তব্য প্রদান করেন। নৌবাহিনী প্রধান তাঁর বক্তব্যে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মউৎসর্গকারী সকল বীর যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং বর্তমান সরকারের সময়ে নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে গৃহীত পদক্ষেপের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি সশস্ত্র বাহিনীর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা ও দিকনির্দেশনা নৌ সদস্যদের কর্মস্পৃহা ও মনোবল বৃদ্ধি করেছে বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। পরিশেষে নৌপ্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মূল্যবান দিকনির্দেশনায় নৌবাহিনীর জন্য দক্ষ, সৎ ও উন্নত গুণাবলীর নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এরপর বিমান বাহিনী প্রধান তাঁর বক্তব্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি উল্লেখ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা ও দুরদৃষ্টিসম্পন্ন দিকনির্দেশনার ফলে বিমান বাহিনীর অপারেশনাল ও রক্ষণাবেক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। বিমান বাহিনী প্রধান আশ্বস্ত করেন যে, বিমান বাহিনী নির্বাচনী পর্ষদের কার্যক্রম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হবে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের মেধা, দক্ষতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং পেশাদারিত্বের পাশাপাশি দেশপ্রেমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে।
এর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌ সদর দপ্তরে এসে পৌঁছালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান, ওএসপি, এনপিপি, এনডিসি, এনসিসি, পিএসসি এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান, বিবিপি, বিইউপি, এনএসডবিøউসি, এফএডবিøউসি, পিএসসি। নির্বাচনী পর্ষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবঃ) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, আরসিডিএস, পিএসসি, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেঃ জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, সিনিয়র সচিব প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গোলাম মোঃ হাসিবুল আলমসহ নৌ ও বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।