ঢাকা, ১৬ ডিসেম্বর: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আজ ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে মহান বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ ২০২১ অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, এমপি ও তিন বাহিনী প্রধানগণ উপস্থিত থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিজয় দিবস প্যারেড-২০২১ এর বিশেষ অতিথি ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ’কে অভ্যর্থনা জানান। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যগণ, সংসদ সদস্যগণ, উর্দ্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ এবং বৈদেশিক কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।
মহান বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ ২০২১ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক ডিভিশনের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, সশস্ত্র বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনীসমূহ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এই কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের বিষয়টি এই কুচকাওয়াজে বিমূর্ত হয়ে উঠে।
বিজয় দিবস কুচকাওয়াজে প্যারেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জেনারেল অফিসার কমান্ডিং, ৯ পদাতিক ডিভিশন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক, বিএসপি, এনডিসি, এইচডিএমসি, পিএসসি এবং প্যারেড উপ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন কমান্ডার, ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেড, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাজিম-উদ-দৌলা, এসপিপি, পিএসসি, পিএইচডি। উক্ত কুচকাওয়াজে বিভিন্ন বাহিনীর সর্বমোট ২৩ টি কন্টিনজেন্ট এবং বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভুটান, ভারত এবং রাশিয়ার ৩টি কন্টিনজেন্ট ও মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক দল মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে সালাম প্রদান করেন। উল্লেখ্য যে, এই বারই প্রথমবারের মতো কুচকাওয়াজে ০৫টি বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের কন্টিনজেন্ট ও পর্যবেক্ষক দল অংশগ্রহণ করে। কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী সম্মিলিত যান্ত্রিক বহরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কমান্ডার, ৯ আর্টিলারি ব্রিগেড, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম সাজেদুল ইসলাম, এনডিসি, এএফডবি¬উসি, পিএসসি, জি। জাতিসংঘ কন্টিনজেন্ট ও বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রসমূহের কন্টিনজেন্টের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কমান্ডার, ৮১ পদাতিক ব্রিগেড, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ শাহান সাদি, পিএসসি। কুচকাওয়াজের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মুর্যাল ও সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ’র প্রতিকৃতি প্রদর্শনীর পরই সুসজ্জিত বাহনে মুক্তিযোদ্ধা কন্টিনজেন্ট রাষ্ট্রপতিকে সালাম প্রদান করেন। চিত্তাকর্ষক যান্ত্রিক বহরে সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সংবলিতআকর্ষণীয় ও সুসজ্জিত গাড়ী বহর অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও, আর্মি এভিয়েশন, নেভাল এভিয়েশন ও র্যাব ফোর্সেস এর ফ্লাইপাষ্ট, দুঃসাহসিক প্যারা কমান্ডো সদস্যদের ফ্রিফল জাম্প এবং hi Special Patrol Insertion and Extraction (SPIE) অপারেশন ডিসপ্লে¬ কুচকাওয়াজকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।
যান্ত্রিক বহরের প্রদর্শনীর পরপরই শুরু হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এক মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট ও এরোবেটিক ডিসপ্লে । বিমান বাহিনীর ফ্লাইপাস্টের নেতৃত্ব দেন এয়ার ভাইস মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডবিøউসি, পিএসসি, জিডি(পি)।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। নতুন প্রজন্মের নিকট মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার লক্ষ্যে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারসহ প্যারেড গ্রাউন্ডে আসার পথে ঢাকা শহরের সার্ক ফোয়ারা হতে জাহাঙ্গীর গেইট, বিজয় স্বরণী, বিজয় চত্বর, গণভবন হতে রোকেয়া স্বরণী হয়ে আগারগাঁও এবং রাসেল চত্বর হয়ে আমিন বাজার পর্যন্ত সড়কগুলোতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বিজয় দিবসের চেতনা সংবলিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যানার ও বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়। এই সকল ব্যানার ও বিলবোর্ড সমূহের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধ তথা বাঙালি জাতির অমর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। এছাড়াও, প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ছাড়াও কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী সকল বাহিনীর উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ডের ছবি প্রদর্শন করা হয়। প্যারেড গ্রাউন্ডের সাজসজ্জা এবং পোডিয়ামের উভয় পাশে স্থাপিত বিভিন্ন বিলবোর্ড ও ফেস্টুনে ফুটিয়ে তোলা হয় আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক জাতীয় পতাকার লাল ও সবুজ রং।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ বছরে মহান বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ সুষ্ঠু ও সার্থক করতে গণপূর্ত অধিদপ্তর, পিডিবি, ঢাকা ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন, টিএন্ডটি, ডেসকো, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, পিডব্লিউ ডি ও স্থাপত্য অধিদপ্তর ও সমন্বিতভাবে কাজ করেছে।