Home » স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ এর ফিউনারেল প্যারেড অনুষ্ঠিত

স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ এর ফিউনারেল প্যারেড অনুষ্ঠিত

Author: আইএসপিআর

ঢাকা, ১০ মে ২০২৪ ঃ স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ এর ফিউনারেল প্যারেড এবং দ্বিতীয় নামাজে জানাযা আজ শুক্রবার (১০-৫-২০২৪) ঢাকা সেনানিবাসস্থ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার এর প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। সেনাবাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, ওএসপি, এসজিপি, পিএসসি ও বিমান বাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিচালন) এয়ার ভাইস মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি এবং নৌবাহিনী প্রধান এর পক্ষ থেকে ঢাকা নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মাসুদ ইকবাল এনপিপি, এনডিসি, পিএসসি মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

এছাড়াও, অনুষ্ঠানে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ এর পরিবারের সদস্যগণ, সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং অন্যান্য পদবীর সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ফিউনারেল প্যারেড শেষে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ-কে মানিকগঞ্জ সদর কবরস্থানে বাদ জুমা তৃতীয় নামাজে জানাযা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক এর প্যারেড গ্রাউন্ড-এ মরহুমের প্রথম নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে গতকাল ০৯ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামস্থ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক থেকে উড্ডয়নের পর প্রশিক্ষণশেষে ফেরার সময় কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। দুর্ঘটনার পর বৈমানিকদ্বয় উইং কমান্ডার মোঃ সোহান হাসান খাঁন, পিএসসি এবং স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ জরুরি প্যারাসুট দিয়ে বিমান থেকে নদীতে অবতরণ করেন। বৈমানিকদ্বয়ের মধ্যে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ এর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তড়িৎ চিকিৎসার জন্য বিএনএস পতেঙ্গাতে নেয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৩২ বছর ০১ মাস ২০ দিন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, এক পুত্র, বাবা-মা এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

উল্লেখ্য, বিমানটিতে আগুন ধরে যাওয়ার পর বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে বৈমানিকদ্বয় অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সাথে বিমানটিকে বিমান বন্দরের নিকট অবস্থিত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান, বিবিপি, বিইউপি, এনএসডব্লিউসি, এফএডব্লিউসি, পিএসসি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবাররের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ, জিডি(পি) ২০ মার্চ ১৯৯২ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানাধীন গোপালপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ডাঃ মোঃ আমান উল্লাহ এবং মাতার নাম নীলুফা আক্তার খানম। তিনি ২০০৭ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ থেকে বিএসসি (এ্যারো) পাশ করেন।

স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ ১০ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন এবং ০১ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে ক্যাডেটদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান সোর্ড অব অনার প্রাপ্তিসহ জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন। কমিশন প্রাপ্তির পর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাঁর চাকরীকাল ১২ বছর ০৫ মাস ০৯ দিন। চাকরীকালীন সময়ে তিনি বিমান বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও ইউনিটে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর মধ্যে তিনি এ্যাডজুটেন্ট ১৫ স্কোয়াড্রন বি বা, এ্যাডজুটেন্ট ৩৫ স্কোয়াড্রন বি বা, ইন্সট্রাক্টর্স পাইলট ১১ স্কোয়াড্রন বি বা, স্টাফ ইন্সট্রাক্টর্স -ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর্স স্কুল বি বা, ইন্সট্রাক্টর্স পাইলট ১০৫ এজেটিইউ বি বা, কোয়ালিফাইড উইপন ইন্সট্রাকটর ২১ স্কোয়াড্রন বি বা এবং ফ্লাইট কমান্ডার (অপস্) এন্ড ইন্সট্রাক্টর্স ২১ স্কোয়াড্রন বি বা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি পেশাদারী দক্ষতা ও সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘মফিজ ট্রফি’, ‘বিমান বাহিনী প্রধান ট্রফি’ ও বিমান বাহিনী প্রধানের প্রশংসাপত্র লাভ করেন। এছাড়াও ভারতীয় বিমান বাহিনীতে কোর্সে অংশগ্রহণ করে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘Chief of Air Staff’s Trophy for Best in Flying (Indian Air Force)Õ অর্জন করেন।  

চাকরীকালীন সময়ে দেশে-বিদেশে পেশাগত বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে সফলতার সাথে তা সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে ওয়াটারম্যানশীপ কোর্স, বেসিক লোকাল এডমিন কোর্স, ফিজিক্যাল ফিটনেস কোর্স, জেনারেল সারভাইভাল কোর্স, অপস্ ইন্টেলিজেন্স কোর্স, ফরওয়ার্ড এয়ার কন্ট্রোলার কোর্স, এলিমেন্টারি সেফটি কোর্স, বেসিক জেট এন্ড ফাইটার কনভার্সন কোর্স, অপস্ কনভার্সন কোর্স, এলিমেন্টারি লিডারশীপ কোর্স, ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর্স কোর্স, ফ্লাইং সুপারভিশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট কোর্স, ফিজিক্যাল ইনডকট্রিনেশন কোর্স, জুনিয়র কমান্ড এন্ড স্টাফ কোর্স, অপস্ কনভার্সন কোর্স এন্ড রেয়ার ককপিট ক্লিয়ারেন্স কোর্স ও ফ্লাইট লীডারশীপ কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে এভিয়েশন ইন্সট্রাক্টর্স পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন।

এছাড়া, তিনি চীন থেকে ফাইটার পাইলটস ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স, ভারত থেকে অপারেশনাল ট্রেনিং ইন এভিয়েশন মেডিসিন ফর ফাইটার পাইলটস কোর্স, বেসিক এয়ার স্টাফ কোর্স ও কোয়ালিফাইড ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর্স কোর্স সম্পন্ন করেন।

সম্পর্কিত পোস্ট