Home » বীর মুক্তিযোদ্ধা এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ, বীর উত্তম, এসিএসসি (অবঃ) এর ফিউনারেল প্যারেড অনুষ্ঠিত

বীর মুক্তিযোদ্ধা এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ, বীর উত্তম, এসিএসসি (অবঃ) এর ফিউনারেল প্যারেড অনুষ্ঠিত

Author: আইএসপিআর

ঢাকা, ১৭ আগস্ট ঃ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতির গর্বিত কৃতি সন্তান এবং সাবেক বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ, বীর উত্তম, এসিএসসি (অবঃ) ১৪ আগস্ট ২০২৩, সোমবার আনুমানিক রাত ৮ টা ৩০ মিনিটে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর, ১৪ দিন। তিনি স্ত্রী ফেরদৌস আরা মাহমুদ, ০১ কন্যা, ০১ পুত্র ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার প্যারেড গ্রাউন্ড-এ ১৭ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয় এবং গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম নাজমুল হাসান, ওএসপি, এনপিপি, এনডিসি, এনসিসি, পিএসসি এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান, বিবিপি, বিইউপি, এনএসডব্লিউসি, এফএডব্লিউসি, পিএসসি মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। সেনাবাহিনী প্রধানের পক্ষে পুষ্পস্তবক করেন জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার, লজিস্টিকস্ এরিয়া মেজর জেনারেল মোঃ মঈন খান, এনডিসি, পিএসসি। এছাড়াও অনুষ্ঠানে এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ, বীর উত্তম (অবঃ) এর পরিবারের সদস্যগণ, সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং অন্যান্য পদবীর সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ফিউনারেল প্যারেড শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ, বীর উত্তম (অবঃ) -কে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার এ অবস্থিত শাহীন কবরস্থানে দাফন করা হয়। বীরমুক্তিযোদ্ধার সম্মানার্থে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃক বিভিন্ন বিমানের ফ্লাই পাস্ট অনুষ্ঠিত হয় এবং আকাশ হতে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার প্যারেড গ্রাউন্ড ও তার গ্রামের বাড়িতে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এর আগে মরহুমের প্রথম নামাযে জানাযা গুলশান আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ, বীর উত্তম, এসিএসসি (অবঃ) ০১ আগস্ট ১৯৪৪ সালে তৎকালীন নোয়াখালী (বর্তমানে ফেনী) জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম নূরুল হুদা এবং মাতার নাম মরহুমা আনকুরেন্নেনছা বেগম। তিনি আরমানিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৬০ সালে পিএএফ পাবলিক স্কুল, সারগোদা, পাকিস্তান হতে মেট্র্রিকুলেশন ও ১৯৬২ সালে পিএএফ একাডেমি, রিসালপুর, পাকিস্তান হতে এফএসসি এবং ১৯৭৭ সালে এয়ার স্টাফ কলেজ, যুক্তরাষ্ট্র হতে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১৯ আগস্ট ১৯৬০ সালে তদানিন্তন পাকিস্তান বিমান বাহিনী একাডেমীতে যোগদান করেন এবং ০১ জুলাই ১৯৬২ সালে জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন। এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ ছিলেন একজন চৌকস বৈমানিক। চাকরিকালীন তিনি দেশ বিদেশে বিভিন্ন পেশাগত কোর্সে অংশগ্রহণ করেন এবং সফলতার সাথে তা সম্পন্ন করেন।

এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ বীর উত্তম ১৯৭১ সালে বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। অর্জন করেন লাল-সবুজের পতাকা। বীর মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন স্কোয়াড্রন লীডার সুলতান মাহমুদের বীরত্বগাথা এ মহান ইতিহাসের এক অনুকরণীয় অধ্যায়।

তৎকালীন স্কোয়াড্রন লীডার সুলতান মাহমুদ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের অদম্য ইচ্ছায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে ২ নং সেক্টরে (মতিনগর ও মেলাঘর) স্থলযুদ্ধে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ১নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। একজন বৈমানিক হওয়া সত্তে¡ও স্থলযুদ্ধে তিনি অদম্য সাহসের সাথে রামগড় থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত অসংখ্য দুঃসাহসিক অপারেশন পরিচালনা করেন। গেরিলা কমান্ডার হিসেবে তাঁর পরিচালিত বড় একটি অভিযান হলো চট্টগ্রামের মদুনাঘাটে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন ধ্বংস ও চট্টগ্রাম এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা। এই স্থলযুদ্ধ চলাকালে তিনি ডান হাঁটুতে শত্রুর বুলেটবিদ্ধ হয়েছিলেন।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন স্কোয়াড্রন লীডার সুলতান মাহমুদ সুস্থ হয়ে ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে নবগঠিত ‘কিলো ফ্লাইট’ এর অধিনায়কত্ব গ্রহনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি পাইলট ইন কমান্ড হিসেবে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে অ্যালুয়েট-৩ হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল তেল ডিপো ধ্বংস করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম বিমান আক্রমণ অভিযানের সূচনা করেন। তাঁর চৌকষ অধিনায়কত্বে কিলো ফ্লাইট স্বল্পসময়ের মধ্যে মোট ৫০টি দুঃসাহসিক বিমান অভিযান সাফল্যের সাথে পরিচালনা করে। তন্মধ্যে তিনি ২৫টি অভিযানে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। আকাশ হতে পরিচালিত এ সকল অভিযানসমূহ শত্রুর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসের পাশাপাশি তাদের মনোবল দূর্বল করে যা আমাদের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বীর মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন স্কোয়াড্রন লীডার সুলতান মাহমুদ যুগপৎভাবে স্থলযুদ্ধে দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা, নবগঠিত বিমান বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান এবং আকাশযুদ্ধে অকুতোভয় আক্রমণ পরিচালনা করার মাধ্যমে দেশপ্রেমের এক অনন্য নজির স্থাপন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশাত্মবোধ ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য তৎকালীন স্কোয়াড্রন লীডার সুলতান মাহমুদকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পূনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন এবং অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ পালন করেন। এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ ১৯৮১ সালের ২৩ জুলাই বিমান বাহিনী প্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৭ সালের ২৩ জুলাই বিমান বাহিনীর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ, বীর উত্তম, এসিএসসি (অবঃ)-কে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তাঁর অনন্য সাধারণ ভূমিকা, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে একটি সুসংগঠিত ও কার্যকরী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা এবং পরবর্তীকালে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে দেশ গঠনে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১৮’এ ভূষিত করে।

সম্পর্কিত পোস্ট