ঢাকা, ১০ নভেম্বর ২০১৯ ঃ ঘূর্ণিঝড় “বুলবুল” এর পরিস্থিতি মনিটরিং এর জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে “প্রধানমন্ত্রীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় ও ত্রাণ তৎপরতা মনিটরিং সেল” ২৪/৭ সচল করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ সকল মন্ত্রণালয় এবং বাহিনীসমূহের সাথে সার্বক্ষনিক নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ বজায় রেখেছে। মন্ত্রণালয়ের চাহিদার প্রেক্ষিতে বাহিনীসমূহ কর্তৃক কার্যক্রম গ্রহণের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী : সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের অনুরোধে যশোর থেকে সেনাবাহিনীর ১২০ সদস্যের ১টি উদ্ধারকারী দল প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী ও যানবাহন নিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগড়ে মোতায়েন হয়েছে। সেনাবাহিনী স্থানীয় জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরে সহায়তা করেছে। সেনাবাহিনীর সকল ব্রিগেড/ডিভিশনসমূহ স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করছে এবং যে কোন প্রয়োজনে সহায়তা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে প্রয়োজনীয় উদ্ধার সামগ্রী নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনী কর্তৃক দুর্যোগ পরবর্তী সহায়তার জন্য ঔষধসামগ্রী, খাবার পানি, শুকনো খাবার জরুরী প্রয়োজনে বিতরনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এতদসংক্রান্ত যোগাযোগের জন্য ২৪/৭ মনিটরিং সেল চালু রয়েছে। বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মায়ানমার নাগরিক ক্যাম্প এর ক্ষয়ক্ষতি রোধে জরুরী সহায়তার জন্য সর্বাত্ত্বক প্রস্তÍতি গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশন কর্তৃক আনুমানিক ২০০০ সেনাসদস্যকে ১৫ টি দলে বিভক্ত করে সার্বক্ষনিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ৫ টি চিকিৎসা সহায়তা প্রদানকারী দল, ৭৫০০ টি শুকনা খাবারের প্যাকেট, ০৩টি পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট এবং উদ্ধারকার্য সম্পাদনের জন্য ৪৫টি ট্রাইশাক বোট যশোর সেনানিবাসে প্রস্তুত রয়েছে। জিওসি, ৫৫ পদাতিক ডিভিশন এবং এরিয়া কমান্ডার, যশোর এরিয়া মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান এর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ডিভিশন সদর দপ্তরে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ হতে সার্বিক পরিস্থিতির নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে সর্বদা সমন্বয় করা হচ্ছে।
এছাড়া, ৭ পদাতিক ডিভিশন, শেখ হাসিনা সেনানিবাস ঘূর্ণিঝড় “বুলবুল” পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে বরিশাল, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি এ ৫টি জেলার সকল উপজেলায় সেনাসদস্য দ্রুত মোতায়েনের প্রস্তÍতি গ্রহণ করেছে। প্রত্যেকটি উপজেলায় উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনার জন্য অফিসারের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় জনবল, যানবাহন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি আলাদাভাবে প্রস্তÍত রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের চাহিদা অনুসারে প্রয়োজনীয় সম্ভাব্য উদ্ধার সামগ্রী এবং নৌপথে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর লক্ষ্যে বিশেষ ধরণের নৌযান “ট্রাই শার্ক” বোট প্রস্তÍত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী প্রাথমিক মানবিক ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনার জন্য খাবার ও রশদ সামগ্রীসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক খাবারের প্যাকেট ও প্রয়োজনীয় খাবার পানি প্রস্তÍুত রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য আহত ও অসুস্থ দুর্গত লোকজনকে চিকিৎসা-সহায়তা উদয়নের লক্ষ্যে প্রতি উপজেলায় একটি করে মেডিকেল টিম প্রস্তÍুত রাখা হয়েছে। চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও যন্ত্রপাতিসহ এম্বুলেন্স প্রস্তুত রয়েছে ও সম্ভাব্য হতাহতদের জরুরী উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য সব ধরণের প্রস্তÍুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ঝড়ের অবস্থা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন কার্যাদি সমন্বয়ের জন্য ২৪ ঘন্টার জন্য ফর্মেশন কন্ট্রোল সেল কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী : গভীর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া সন্দ¡ীপ ও হাতিয়ার ৪০টি মাছ ধরার নৌকার প্রায় তিন শতাধিক জেলে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এর কবলে পড়ে গতকাল শনিবার (০৯-১১-২০১৯) রাতে ভাষাণচরে আশ্রয় নেয়। বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের জন্য নোয়াখালী জেলার ভাষাণচরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক নির্মিত অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এ সকল জেলেদের আশ্রয় দেয়া হয়। এ সময় নৌসদস্যরা তাদেরকে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে। বর্তমানে আশ্রয় নেয়া জেলেরা সুস্থ ও নিরাপদ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এর প্রভাবে তীব্র জলোচ্ছ্বাস ও পানির উচ্চতা বৃদ্ধি সত্ত্বেও ভাষাণচরে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে পারেনি। এর আগে উপকূলীয় এলাকাসমূহে ঘূর্ণিঝড় এর কারণে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা থাকায় সন্দ¡ীপ, হাতিয়া ও আশেপাশের জেলাগুলোর মাছ ধরার নৌকাসমূহকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়। এতে প্রায় তিনশতাধিক জেলে ভাষাণচরে নির্মিত অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করে। তাছাড়া, ভাষাণচরের নির্মাণ কাজে নিয়োজিত প্রায় ৩ হাজার শ্রমিকও বর্তমানে নিরাপদ আশ্রয়ে ভাষাণচরে অবস্থান করছে। উল্লেখ্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের জন্য ১২০টি ঘূর্ণিঝড় শেল্টার স্টেশনসহ ভাষাণচরে লক্ষাধিক মানুষের জন্য আশ্রয়স্থল নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে বর্তমানে সবাই নিরাপদ রয়েছে।
ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২৭ টি জাহাজ নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৪ টি কন্টিনজেন্ট ও চিকিৎসা সহায়তাকারী দল মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। মোতায়েনকৃত কন্টিনজেন্ট সাতক্ষীরা জেলার গাবুড়া ইউনিয়নের স্থানীয় জনগণকে গাবুড়া থেকে নীল ডুমুর এলাকায় স্থানান্তর এবং আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তরে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান করে। নৌবাহিনীর ৪ টি জাহাজ (বিএনএস কর্ণফুলী, তিস্তা, পদ্মা ও এলসিভিপি ০১১) দুর্যোগ পরবর্তী আজ থেকে হিরন পয়েন্ট ও ততসংলগ্ন এলাকায় অনুসন্ধান অভিযান পরিচালনা করবে। এছাড়াও অন্যান্য জাহাজসমূহ আগামীকাল থেকে এলাকা অনুসারে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করবে।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী : বিমান বাহিনী সদর দপ্তরে ঘূর্ণিঝড় “বুলবুল” এর পরিস্থিতি মনিটরিং এর জন্য সার্বক্ষনিক মনিটরিং সেল সচল করা হয়েছে। বিমান বাহিনী হেলিকপ্টার/ফিক্সড উইং এয়ার ক্রাফট দুর্যোগ পরবর্তী রেকি ও যে কোন জরুরী মিশনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিমান বাহিনীর একটি অগ্রগামী দূর্যোগ মোকাবেলা দল ইতিমধ্যে বরিশালে অবস্থান করছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে আসলেই বিমান বাহিনী দূর্গত এলাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের জন্য পর্যবেক্ষণ মিশন পরিচালনা করবে।