ঢাকা, ২১ নভেম্বরঃ ২১শে নভেম্বর ২০১৬ (সোমবার) যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির শুরুতে দেশের সকল সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটির মসজিদসমূহে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
সেনাকুঞ্জে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ হতে সংবর্ধনা
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ হতে সেনাকুঞ্জে অপরাহ্নে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই সংবর্ধনায় সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাগণ ছাড়াও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ ও স্থানীয় দূতাবাসসমূহের বিদেশী কূটনৈতিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, (————— ভাষণের কপি সংযুক্ত————- (সেনাকুঞ্জে বিকেলে প্রদত্ত ভাষণ) ———————-)।
ভাষণ শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনা স্থলে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের সাথে কুশল বিনিময় করেন এবং চা চক্রে মিলিত হন।
এর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেনাকুঞ্জে এসে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ মাহফুজুর রহমান সস্ত্রীক তাঁকে স্বাগত জানান।
সংবর্ধনায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের ¯পীকার, প্রধান বিচারপতি, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিগণ, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা, উপদেষ্টাগণ, মন্ত্রী ও মন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিগণ, প্রতিমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিগণ, সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিগণ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারগণ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশী রাষ্ট্রদূতগণ, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানগণ, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব, ঢাকা এলাকার সংসদ সদস্যগণ, বাহিনীত্রয়ের প্রাক্তন প্রধানগণ, ২০১৬ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত ও একুশে পদক প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল বীরশ্রেষ্ঠের উত্তরাধিকারীগণ, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকা এলাকায় বসবাসরত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/তাঁদের উত্তরাধিকারীগণ, উচ্চপদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তাগণ এবং তিন বাহিনীর চাকুরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ । উক্ত অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি স¤প্রচার করে।
শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ
সকালে, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মোঃ আবদুল হামিদ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পু¯পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে পৃথক পৃথকভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পু¯পস্তবক অর্পণকালে শহীদদের স্মরণে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। পু¯পস্তবক অর্পণ শেষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে রক্ষিত পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে এসে পৌঁছলে তাঁদেরকে স্বাগত জানান তিন বাহিনী প্রধানগণ এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার।
মুক্তিযুদ্ধে শাহাদত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মরণে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে সম্মিলিতভাবে শিখা অনির্বাণে পু¯পস্তবক অর্পণ করেন।
মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে তিন বাহিনী প্রধানগণের সাক্ষাত
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধান বঙ্গভবনে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা
শিখা অনির্বাণে পু¯পস্তবক অর্পণের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে গমন করেন। সেখানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ মাহফুজুর রহমান এবং মহাপরিচালকবৃন্দ। সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধান সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্ধারিত সংখ্যক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা প্রদান করেন। তিনি তাদের হাতে সম্মানী চেক এবং উপহার হিসেবে শাল ও মোবাইল ট্যাব তুলে দেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর ২০ জন খেতাবপ্রাপ্ত জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ পরিচয়পত্র বিতরণ করেন । কার্ডটির সাহায্যে তাঁরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়াও ২০১৫-২০১৬ সালে সশস্ত্র বাহিনীর শান্তিকালীন সেনা ০১ জন ও বিমান বাহিনী ০২ জন সদস্যদের বাহিনী পদক এবং অসামান্য সেবা পদকপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর ০১ জন ও নৌবাহিনীর ০১ জন সদস্যসহ মোট ০৫ জনকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পদকে ভূষিত করা হয়। সংবর্ধনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভাষণ প্রদান করেন।
০৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের নিকট আত্মীয়সহ প্রায় ৭০ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীগণ সংবর্ধনায় যোগ দেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবঃ) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন ও প্রেস সচিব জনাব ইহসানুল করিম, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব এম.এ হান্নানসহ উর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সাথে চা চক্রে মিলিত হন।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে অন্যান্য কর্মসূচী
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে নৌবাহিনী প্রধান আজ (২১ নভেম্বর) নিজ বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা/তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা প্রদান করেন। আগামী ২২ নভেম্বর সেনাবাহিনী প্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধান নিজ নিজ বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা প্রদান করবেন।
দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য সেনা গ্যারিসন, নৌ জাহাজ ও স্থাপনা এবং বিমান বাহিনী ঘাঁটিতেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। সাভার, বগুড়া, ঘাটাইল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, রংপুর এবং রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসসমূহে এবং খুলনা নৌ ঘাঁটিতে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৬’ উপলক্ষে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
গণমাধ্যমেও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে নানামুখী অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। গতকাল (২০-১১-২০১৬) বাংলাদেশ টেলিভিশন রাত ০৮টার বাংলা সংবাদের পর ‘‘বিশেষ অনির্বাণ’’ অনুষ্ঠান স¤প্রচার করে। বাংলাদেশ বেতার আজ (২১-১১-২০১৬) সন্ধ্যা ০৭৩০ ঘটিকায় ‘‘বিশেষ দুর্বার’’ অনুষ্ঠান স¤প্রচার করে। ২১ নভেম্বরের পরে বেসরকারি টিভি চ্যানেলসমূহ ‘‘বিশেষ অনির্বাণ’’ অনুষ্ঠানটি এবং বেসরকারী রেডিও চ্যানেলসমূহ “বিশেষ দুর্বার” অনুষ্ঠানটি পর্যায়ক্রমে স¤প্রচার করবে। এদিকে, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও, সশস্ত্র বাহিনীর আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
এছাড়া, ঢাকা (সদরঘাট), নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা, চাঁদপুর ও বরিশালে বিশেষভাবে সজ্জিত নৌবাহিনী জাহাজসমূহ ২১ নভেম্বর বেলা ১৪০০ হতে বিকাল ১৬৩০ পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।